পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কালান্তর
২১

না যে 'এই প্রাণ-দেউলে-করা তােমাদের দুর্মূল্য শাসনতন্ত্রের এত অসহ্য দেনা আমরা বহন করতে পারব না যাতে বর্বরদশার জগদ্দল পাথর চিরদিনের মতাে দেশের বুকের উপর চেপে থাকে’? বর্তমান যুগে য়ুরােপ যে সভ্যতার আদর্শকে উদ্ভাবিত করেছে য়ুরােপই কি স্বহস্তে তার দাবিকে ভূমণ্ডলের পশ্চিম সীমানাতেই আবদ্ধ করে রাখবে? সর্বজনের সর্বকালের কাছে সেই সভ্যতার মহৎ দায়িত্ব কি য়ুরােপের নেই?

 ক্রমে ক্রমে দেখা গেল, য়ুরােপের বাইরে অনাত্মীয়মণ্ডলে য়ুরােপীয় সভ্যতার মশালটি আলাে দেখাবার জন্যে নয়, আগুন লাগাবার জন্যে। তাই একদিন কামানের গােলা আর আফিমের পিণ্ড এক সঙ্গে বর্ষিত হল চীনের মর্মস্থানের উপর। ইতিহাসে আজ পর্যন্ত এমন সর্বনাশ আর কোনােদিন কোথাও হয় নি- এক হয়েছিল য়ুরােপীয় সভ্যজাতি যখন নবাবিষ্কৃত আমেরিকায় স্বর্ণপিণ্ডের লােভে ছলে বলে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ‘মায়া’ জাতির অপূর্ব সভ্যতাকে। মধ্যযুগে অসভ্য তাতার বিজিত দেশে নরমুণ্ডের স্তূপ উঁচু করে তুলেছিল; তার বেদনা অনতিকাল পরে লুপ্ত হয়েছে। সভ্য য়ুরােপ চীনের মতাে এত বড় দেশকে জোর করে যে বিষ গিলিয়েছে তাতে চিরকালের মতাে তার মজ্জা জর্জরিত হয়ে গেল। একদিন তরুণ পারসিকের দল দীর্ঘকালের অসাড়তার জাল থেকে পারস্যকে উদ্ধার করবার জন্যে যখন প্রাণপণ করে দাঁড়িয়েছিল, তখন সভ্য য়ুরােপ কিরকম করে দুই হাতে তার টুটি চেপে ধরেছিল সেই অমার্জনীয় শােকাবহ ব্যাপার জানা যায় পারস্যের তদানীন্তন পরাহত আমেরিকান রাজস্বসচিব শুস্টারের Strangling of Persia বইখানা পড়লে। ও দিকে আফ্রিকার কগাে প্রদেশে য়ুরােপীয় শাসন যে কিরকম অকথ্য বিভীষিকায় পরিণত হয়েছিল সে সকলেরই জানা। আজও আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে নিগ্রোজাতি সামাজিক অসম্মানে লাঞ্ছিত, এবং সেই-জাতীয় কোনাে হতভাগ্যকে যখন জীবিত অবস্থায় দাহ করা হয়