পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
কালান্তর

চালিয়ে চালিয়েই অস্তিত্বের প্রতি ভারতের এত বিতৃষ্ণা। তাই সে জন্মজন্মান্তরের পুনরাবর্তন-কল্পনায় আতঙ্কিত হয়ে সকল কর্ম ও কর্মের মূল মেরে দেবার জন্যে চিত্তবৃত্তি নিরােধ করবার কথা ভাবছে। এই পুনরাবৃত্তির বিভীষিকা সে আপন প্রতিদিনের অভ্যাসজড় কর্মচক্রের ঘুরপাকের মধ্যেই দেখেছে। লােকসান শুধু এইটুকু নয়, এমনি করে যারা কল ব’নে গেল তারা বীর্য হারালাে, কোনাে আপদকে ঠেকাবার শক্তিই তাদের রইল না। যুগ যুগ ধরে চতুর তাদের ঠকাচ্ছে, গুরু তাদের ভােলাচ্ছে, প্রবল তাদের কান-মলা দিচ্ছে। তারা এর কোনাে অন্যথা কল্পনামাত্র করতে পারে না, কারণ তারা জানে মেরে রেখেছেন বিধাতা; সৃষ্টির আদিকালে চতুর্মুখ তাদের চাকায় দম দিয়ে বসে আছেন, সে দম সৃষ্টির শেষকাল পর্যন্ত ফুরােবে না। একঘেয়ে কাজের জীবমৃত্যুর ভেলার মধ্যে কালস্রোতে তাদের ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সনাতন শাস্ত্র যাই বলুন-না, সৃষ্টির গােড়ায় ব্রহ্মা মানুষকে নিয়ে যে কাণ্ড করেছিলেন এরবসঙ্গে তার সম্পূর্ণই তফাত। মানুষের খােলের মধ্যে ঘূর্ণিচাকার মােটর-কলববসিয়ে মন বলে অত্যন্ত ছটফটে একটা পদার্থ ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই বালাইটাকে বিদায় করতে না পারলে মানুষকে কল করে তােলা। দুঃসাধ্য। ঐহিক বা পারত্রিক ভয়ে বা লােভে বা মােহমন্ত্রে এই মনটাকে আধমরা করে তবে কর্তারা এক দলের কাছে কেবলই আদায় করছেননতাঁতের কাপড়, আর-এক দলের কাছে কেবলই ঘানির তেল- এক দলবকেবলই জোগাচ্ছে তাদের ফরমাসের হাঁড়ি, আর-এক দল বানাচ্ছে। লাঙলের ফাল। তার পরে যদি দরকার হয় মনুষ্যোচিত কোনাে বড়ো কাজে তাদের মন পেতে তারা বলে বসে, ‘মন? সেটা আবার কোন্ আপদ! হুকুম করাে-না কেন? মন্ত্র আওড়াও।'

 গাছ বসিয়ে বেড়া তৈরি করতে গেলে সব গাছকেই সমান খাটো করে ছাঁটতে হয়। তেমনি করে আমাদের এই ছাঁটা মনের মুলুকে মানুষের