পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৬
কালান্তর

দিয়েই হাত চালিয়ে পেট চালানাে। তাই বলে মানুষের প্রধানতর অর্ধেকটা। বাদ দেওয়াতেই তার dignity, এমন কথা বলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া তাকে বিদ্রুপ করা। বস্তুত পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকেই এই যন্ত্রীভবনের পঙ্গুতা থেকে বাঁচাবে কিসে, এইটেই হয়েছে মস্ত সমস্যা। আমার বিশ্বাস, সব বড়াে সভ্যতাই হয় মরেছে নয় জীবন্মৃত হয়েছে, অল্প লােকের চাপে বহু লোেককে মন-মরা করে দেওয়াতেই। কেননা মনই মানুষের সম্পদ। মনােবিহীন মজুরির আন্তরিক অগৌরব থেকে মানুষকে কোনাে বাহ্য সমাদরে বাঁচাতে পারা যায় না। যারা নিজের কাছেই নিজে ভিতর থেকে খাটো হয়ে গেছে অন্যেরা তাদেরই খাটো করতে পারে। য়ুরােপীয় সভ্যতার বিজ্ঞানচর্চার সামনে যদি কোনাে বড়াে নৈতিক সাধনা থাকে সে হচ্ছে বাহ্যপ্রকৃতির হাতের সবরকম মার থেকে মানুষকে বাঁচানাে, আর হচ্ছে মানুষেরই মনটাকে যন্ত্রে না বেঁধে প্রাকৃতিক শক্তিকেই যন্ত্রে বেঁধে সমাজের কাজ আদায় করা। এ কথা নিশ্চিত যে, বিজ্ঞানকে এক পাশে ঠেলে রেখে কেবল হাত চালিয়ে দেশের বিপুল দারিদ্র্য কিছুতে দূর হতে পারে না। মানুষের জানা এগিয়ে চলবে না, কেবল তার করাই চলতে থাকবে, মানুষের পক্ষে এত বড়াে কুলিগিরির সাধনা আর কিছুই নেই।

 একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, মানুষ যেদিন প্রথম চাকা আবিষ্কার করেছিল সেদিন তার এক মহা দিন। অচল জড়কে চক্রাকৃতি দিয়ে তার সচলতা বাড়িয়ে দেবা মাত্র, যে বােঝা সম্পূর্ণ মানুষের নিজের কাঁধে ছিল তার অধিকাংশই পড়ল জড়ের কাধে। সেই তাে ঠিক কেননা জড়ই তাে শূদ্র। জড়ের তাে বাহিরের সত্তার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরের সত্তা নেই; মানুষের আছে, তাই মানুষ-মাত্রই দ্বিজ। তার বাহিরের প্রাণ, অন্তরের প্রাণ, উভয়কেই রক্ষা করতে হবে। তাই জড়ের উপর তার বাহ্য কর্মভার যতটাই সে না চাপাতে পারবে ততটাই চাপাতে হবে মানুষের উপর। সুতরাং ততটা পরিমাণেই মানুষকে জড় করে শূদ্র করে তুলতেই