পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৮
কালান্তর

 আমাকে কেউ কেউ বলেছেন, ‘চরকা ছাড়া আর কোনাে কাজ কোরাে না,এমন কথা তাে আমরা বলি নে। তা হতে পারে, কিন্তু ‘আর কোনাে কাজ করাে’ এ কথাও তাে বলা হয় না। সেই না-বলাটাই কি প্রবল একটা বলা নয়? স্বরাজসাধনায় একটিমাত্র কাজের হুকুম অতি নির্দিষ্ট, আর তার চার দিকেই নিঃশব্দতা। এই নিঃশব্দতার পটভূমিকার উপরে চরকা কি অত্যন্ত মস্ত হয়ে দেখা দিচ্ছে না? বস্তুত সে কি এতই মস্ত? ভারতবর্ষের তেত্রিশ কোটি লােক স্বভাবস্বাতন্ত্রনির্বিচারে এই ঘূর্ন্যমান চরকার কাছে যে যতটা পারে আপন সময় ও শক্তির নৈবেদ্য সমর্পণ করবে চরকার কি প্রকৃতই সেই মহিমা আছে? একই পূজাবিধিতে একই দেবতার কাছে সকল মানুষকে মেলবার জন্যে আজ পর্যন্ত নানা দেশে বারে বারে ডাক পড়ল। কিন্তু তাও কি সম্ভব হয়েছে? পূজাবিধিই কি এক হল, না দেবতাই হল একটি? দেবতাকে আর দেবার্চনাকে সব মানুষের পক্ষে এক করবার জন্য কত রক্তপাত, কত নিষ্ঠুর অত্যাচার পৃথিবীতে চলে আসছে। কিছুতেই কিছু হল না, শুধু কি স্বরাজতীর্থের সাধনমন্দিরে একমাত্র চরকা-দেবীর কাছেই সকলের অর্ঘ্য এসে মিলবে? মানবধর্মের প্রতি এত অবিশ্বাস? দেশের লােকের 'পরে অত অশ্রদ্ধা?

 গুপী ব'লে আমাদের এক পশ্চিমদেশী বেহারা ছিল। ছেলেবেলায় তার কাছে গল্প শুনেছিলুম যে, যখন সে পুরীতীর্থে গিয়েছিল, জগন্নাথের কাছে কোন খাদ্য ফল উৎসর্গ করে দেবে এই নিয়ে তার মনে বিষম ভাবনা উপস্থিত হল। সে বার বার মনে মনে সকলরকম খাবার যােগ্য ফলের ফর্দ আউড়িয়ে যেতে লাগল। কোনােটাতেই তার মন সায় দিলে। অবশেষে হঠাৎ মনে পড়ে গেল বিলিতি বেগুন। তখনি তার দ্বিধা গেল ঘুচে, জগন্নাথকে দিয়ে এল বিলিতি বেগুন, শেষ পর্যন্ত এ সম্বন্ধে তার পরিতাপ রইল না।

 সব চেয়ে সহজ দেবতার কাছে সব চেয়ে কম দেওয়ার দাবি মানুষের