পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চরকা
২৬১

 রাষ্ট্রনীতি যেমন একান্ত নেশন-স্বাতন্ত্রে, জীবিকাও তেমনি একান্ত ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রে আবদ্ধ। এখানে তাই এত প্রতিযােগিতা, ঈর্ষা, প্রতারণা, মানুষের এত হীনতা। কিন্তু মানুষ যখন মানুষ তখন তার জীবিকাও কেবল শক্তিসাধনার ক্ষেত্র না হয়ে মনুষ্যত্বসাধনার ক্ষেত্র হয়, এইটেই উচিত ছিল। জীবিকার ক্ষেত্রেও মানুষ কেবল আপন অন্ন পাবে তা নয়, আপন সত্য পাবে, এই তাে চাই। কয়েক বছর পূর্বে যেদিন সমবায়মূলক জীবিকার কথা প্রথম শুনি আমার মনে জটিল সমস্যার একটা গাঁঠ যেন অনেকটা খুলে গেল। মনে হল, যে জীবিকার ক্ষেত্রে স্বার্থের স্বাতন্ত্র্য মানুযের সত্যকে এতদিন অবজ্ঞা করে এসেছিল সেখানে স্বার্থের সম্মিলন সত্যকে আজ প্রমাণ করবার ভার নিয়েছে। এই কথাই বােঝাতে বসেছে। যে, দারিদ্র মানুষের অসম্মিলনে, ধন তার সম্মিলনে। সকল দিকেই মানব-সভ্যতার এইটেই গােড়াকার সত্য- মনুষ্যলােকে এ সত্যের কোথাও সীমা থাকতে পারে, এ আমি বিশ্বাস করি নে।

 জীবিকায় সমবায়তত্ত্ব এই কথা বলে যে, সত্যকে পেলেই মানুষের দৈন্য ঘােচে, কোনাে-একটা বাহ্য কর্মের প্রক্রিয়ায় ঘােচে না। এই কথায় মানুষ সম্মানিত হয়েছে। এই সমবায়তত্ত্ব একটা আইডিয়া; একটা আচার নয়। এইজন্য বহু কর্মধারা এর থেকে সৃষ্ট হতে পারে। মনের সঙ্গে পদে পদেই এর মুকাবিলা। ইংরাজি ভাষায় যাকে আঁধা গলি বলে জীবিকা-সাধনার পক্ষে এ সেরকম পথ নয়। বুঝেছিলুম, এই পথ দিয়ে কোনাে-একটি বিশেষ আকারের অন্ন নয়, স্বয়ং অন্নপূর্ণা আসবেন, যাঁর মধ্যে অন্নের সকলপ্রকার রূপ এক সত্যে মিলেছে।

 আমার কোনাে কোনাে আত্মীয় তখন সমবায়তত্ত্বকে কাজে খাটাবার আয়ােজন করছিলেন। তাদের সঙ্গে আলােচনায় আমার মন আন্দোলিত হচ্ছিল, এমন সময় আয়র্লণ্ডের কবি ও কর্মবীর A. E. -রচিত National Being বইখানি আমার হাতে পড়ল। সমবায়জীবিকার একটা