পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শূদ্রধর্ম

মানুষ জীবিকার জন্যে নিজের সুযােগমত নানা কাজ করে থাকে। সাধারণত সেই কাজের সঙ্গে ধর্মের যােগ নেই, অর্থাৎ তার কর্তব্যকে প্রয়ােজনের চেয়ে বেশি মূল্য দেওয়া হয় না।

 ভারতবর্ষে একদিন জীবিকাকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। তাতে মানুষকে শান্ত করে। আপনার জীবিকার ক্ষেত্রকে তার সমস্ত সংকীর্ণতা- সমেত মানুষ সহজে গ্রহণ করতে পারে।

 জীবিকানির্বাচন সম্বন্ধে ইচ্ছার দিকে যাদের কোনাে বাধা নেই, অধিকাংশ স্থলে ভাগ্যে তাদের বাধা দেয়। যে মানুষ রাজমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখে, কাজের বেলায় তাকে রাজার ফরাসের কাজ করতে হয়। এমন অবস্থায় কাজের ভিতরে ভিতরে তার বিদ্রোহ থামতে চায় না।

 মুশকিল এই যে রাজসংসারে ফরাসের কাজের প্রয়ােজন আছে, কিন্তু রাজমন্ত্রীর পদেরই সম্মান। এমন-কি, যে স্থলে তার পদই আছে, কর্ম নেই, সেখানেও সে তার খেতাব নিয়ে মানের দাবি করে। ফরাস এ দিকে খেটে খেটে হয়রান হয় আর মনে মনে ভাবে, তার প্রতি দৈবের অবিচার। পেটের দায়ে অগত্যা দীনতা স্বীকার করে, কিন্তু ক্ষোভ মেটে না।

 ইচ্ছার স্বাধীনতার স্বপক্ষে ভাগ্যও যদি যােগ দিত, সব ফরাসই যদি রাজমন্ত্রী হয়ে উঠত, তা হলে মন্ত্রণার কাজ যে ভাললা চলত তা নয়, ফরাসের কাজও একেবারেই বন্ধ হয়ে যেত।

 দেখা যাচ্ছে, ফরাসের কাজ অত্যাবশ্যক, অথচ ফরাসের পক্ষে তা অসন্তোষজনক। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে কাজ করা অপমানকর।

 ভারতবর্ষ এই সমস্যার মীমাংসা করেছিল বৃত্তিভেদকে পুরুষানুক্রমে পাকা করে দিয়ে। রাজশাসনে যদি পাকা করা হত তা হলে তার মধ্যে