পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭২
কালান্তর

চারিত্রশক্তি এ দেশে সম্প্রতি কোথাও দেখা যাচ্ছে না, সে কথা স্বীকার করতেই হবে। দেশের যে-একটা মস্ত মিলনতীর্থ মহাত্মাজির শক্তিতে গড়ে উঠেছে এখনো সেটাকে তাঁরই সহযোগিতায় রক্ষা করতে ও পরিণতি দান করতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

 তুমি জান আমার স্বভাবটা একেবারেই সনাতনী নয়— অর্থাৎ খুঁটিগাড়া মত ও পদ্ধতি অতীত কালে আড়ষ্ট ভাবে বদ্ধ হয়ে থাকলেই যে শ্রেয়কে চিরন্তন করতে পারবে, এ কথা আমি মানি নে। বর্তমান কন্‌গ্রেস যত বড়ো মহৎ অনুষ্ঠানই হোক-না কেন, তার সমস্ত মত ও লক্ষ্য যে একেবারে দৃঢ়নির্দিষ্ট ভাবে নির্বিকার নিশ্চল হয়ে গেছে তাও সত্য হতেই পারে না। কোনোদিনই তা না হোক, এই আকাক্ষা করি। কিন্তু এই কন্‌গ্রেসের পরম মূল্য যখন উপলব্ধি করি এবং এ কথাও যখন জানি এই কন্‌গ্রেস একটি মহৎ ব্যক্তিস্বরূপের সৃষ্টি, তখন হঠাৎ এ'কে সজোরে নাড়া দেবার উপক্রম দেখলে মন উৎকণ্ঠিত না হয়ে থাকতে পারে না। তখন এই কথাই মনে হয় এর পরিণতি ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এর ভিতর থেকেই সঞ্চারিত করতে হবে। বাইরে থেকে কাটা-ছেড়া করে নয়।

 ইতিপূর্বে কন্‌গ্রেসনামধারী যে প্রতিষ্ঠান ভারতবর্ষে আন্দোলন জাগিয়েছিল তার কথা তো জানা আছে। তার আন্দোলন ছিল বাইরের দিকে। দেশের জনগণের অন্তরের দিকে সে তাকায় নি, তাকে জাগায় নি; স্বদেশের পরিত্রাণের জন্যে সে করুণ দৃষ্টিতে পথ তাকিয়ে ছিল বাইরেকার উপরওয়ালার দিকে। পরবশতার ধাত্রীক্রোড়েই তার স্বাধীনতা আশ্রয় নিয়ে আছে, এই স্বপ্ন তার কিছুতে ভাঙতে চায় নি। সেদিনকার হাতজোড়-করা দোহাই-পাড়া মুক্তিফৌজের চিত্তদৈন্যকে বার বার ধিক্কার দিয়েছি; সে তুমি জান। হঠাৎ সেই তামসিকতার মধ্যে দেশের সুপ্ত প্রাণে কে ছুঁইয়ে দিলে সোনার কাঠি, জাগিয়ে দিলে একমাত্র আত্মশক্তির