পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭৬
কালান্তর

সতর্ক হয়ে চলা কর্তব্য। কেননা, সন্ধিগ্ধ মন সকলপ্রকার আঘাত ও অবৈধতাকে অতিমাত্র করে তোলে। তাই ঘটেছে আজ। সমস্ত বাংলাদেশের সঙ্গে কন্‌গ্রেসের বন্ধনে টান পড়েছে ছেঁড়বার মুখে। এর অত্যাবশ্যকতা ছিল না। সমগ্র একটা বড়ো প্রদেশের এরকম মনশ্চাঞ্চল্যের অবস্থায় বাংলাদেশের নেতাদের ঠিক পথে চলা দুঃসাধ্য হবে।

 বুঝতে পারছি স্বদেশকে স্বাতন্ত্রদানের উদ্দেশ্যে মহাত্মাজির মনে একটা বিশেষ সংকল্প বাঁধা রয়েছে। মনে মনে তার পথের একটা ম্যাপ তিনি এঁকে রেখেছেন। অতএব পাছে কোনো বিপরীত মতবাদের অভিঘাতে তার সংকল্পকে ক্ষুন্ন করে, এ আশঙ্কা তার মনে থাকা স্বাভাবিক। তিনিই দেশকে এত দিন এত দূর পর্যন্ত নানা প্রমাদের মধ্যে দিয়েও চালনা করে এনেছেন; সেই চালনার ব্যবস্থাকে শিথিল হতে দিতে যদি তিনি শঙ্কিত হন তা হলে বলব না যে সেই শঙ্কা একাধিপত্যপ্রিয়তার লোভে। প্রতিভাসম্পন্ন পুরুষমাত্রেরই নিজের ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় না থাকলে তাঁদের জীবনের উদ্দেশ্য বিফল হয়। এই বিশ্বাসকে তারা ভগবানের প্রতি বিশ্বাসের সঙ্গে বেঁধে দিয়ে ধ্রুব করে রাখেন। মহাত্মাজির সেই বিশ্বাস যে সার্থক, মোটের উপর তার প্রমাণ পেয়েছেন গুরুতর ভুলচুক সত্ত্বেও। এবং তার মনে যে পরিকল্পনা আছে সেটাকে যথাসম্ভব সম্পূর্ণ করতে তিনি ছাড়া আর-কেউ পারবে না, সেও তিনি বিশ্বাস করেন। সকল প্রভাবসম্পন্ন ব্যক্তিরই এইরকম বিশ্বাসে অধিকার আছে। বিশেষত তখন তার কৃত অসমাপ্ত সৃষ্টি গড়ে ওঠবার মুখে। হয়তো মহাত্মাজির সৃজনশালায় আরো অনেক মূল্যবান নূতন উপকরণ যোগ করবার প্রয়োজন আছে। এই যোগ করা যদি ধৈর্যের সঙ্গে শ্রদ্ধার সঙ্গে তার সহযোগিতায় না ঘটে তা হলে সমগ্রেরই হবে ক্ষতি। এ অবস্থায় মূল। সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর রাখতেই হবে। আমি নিজের সম্বন্ধে এ কথা স্বীকার করব যে, মহাত্মাজির সঙ্গে সকল বিষয়ে আমার মতের ঐক্য