পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কন্‌গ্রেস
৩৭৭

নেই। অর্থাৎ আমি যদি তাঁর মতো চারিত্রপ্রভাবসম্পন্ন মানুষ হতেম তা হলে অন্য রকম প্রণালীতে কাজ করতুম। কী সে প্রণালী, আমার অনেক পুরাতন লেখায় তার বিবরণ দিয়েছি। আমার মননশক্তি যদি বা থাকে কিন্তু আমার প্রভাব নেই। এই প্রভাব আছে জগতের অল্প লোকেরই। দেশের সৌভাগ্যক্রমে দৈবাৎ যদি সেরকম শক্তিসম্পন্ন পুরুষের আবির্ভাব হয় তবে তাঁকে তাঁর পথ ছেড়ে দিতেই হবে, তার কর্মধারাকে বিক্ষিপ্ত করতে পারব না। সময় আসবে যখন ক্রমে অভাবক্রটির মোচন হবে এবং সেই অভাবমোচন আমরা সকলেই আপন আপন ইচ্ছাকে আপন যোগ্যতা অনুসারে প্রবৃত্ত করতে পারব। সামনের যে ঘাট লক্ষ্য করে আজ কর্ণধার নৌকো চালিয়েছেন সে দিকে তাকে যেতে দেওয়া হোক। দূরদৃষ্টিহীন ভক্তদের মতো বলব না, তার উর্ধ্বে আর ঘাট নেই। আরো আছে এবং তার জন্যে আরো মাঝির দরকার হবে।

 আমার মনে যে পরিকল্পনার উদয় হয়েছিল তার কথা পূর্বেই বলেছি। আমি জানি রাষ্ট্রব্যাপার সমাজের অন্তর্গত; কোনো দেশেরই ইতিহাসে তার অন্যথা হয় নি; সামাজিক ভিত্তির কথাটা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রিক ইমারতের কল্পনায় মুগ্ধ হয়ে কোনো লাভ নেই। সমুদ্রের ও পারে দেখা যাচ্ছে নানা আকারের— নানা আয়তনের— জয়তোরণের চূড়া, কিন্তু তাদের কোনোটারই ভিত গাড়া হয় নি বালির উপরে। যখন লুব্ধ মনে তাদের উপরতলার অনুকরণে প্ল্যান আঁকব তখন দেশের সামাজিক চিত্তের মধ্যে নিহিত ভিত্তির রহস্যটা যেন বিচার করি।

 কিছুদিন হল একটি বিরল-বসতি পাহাড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি। আছি সদ্য-উন্মথিত রাষ্ট্রিক উত্তেজনা থেকে দূরে। অনেক দিন পরে ভারতবর্ষকে এবং আপনাকে শান্তমনে দেখবার অবকাশ পাওয়া গেল। দেখছি চিন্তা করে— মানবজগতে দুই প্রবল শক্তি নিয়ে পলিটিকসের ব্যবহার। একটার প্রয়োগ বাহিরের দিকে, সেটা যন্ত্রশক্তি; আর-একটার