পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭৮
কালান্তর

কাজ মানুষের মন নিয়ে, সেটাকে বলতে পারি মন্ত্রশক্তি। আজ য়ুরোপের সংকটের দিনে এই দুই শক্তির হিসাব গণনা করে প্রতিদ্বন্দ্বীরা কখনো এগিয়ে কখনো পিছিয়ে পদচারণা করছে।

 বাহির থেকে একটা কথা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, এই শক্তির কোনোটাই সহজসাধ্য নয়, অনেক তার দাম, সুদীর্ঘ তার প্রয়োগশিক্ষাচর্চা। বহু কাল ধরে আমরা পরের অধীনে আছি, যন্ত্রশক্তির আঘাত কী রকম তা জানি কিন্তু তার আয়ত্তের উপায় আমাদের স্বপ্নের অগোচর। অত্যাবশ্যক বোধ করলে বাহিরের কোনো পালোয়ান জাতির সঙ্গে দেনা চরবার কারবার ফেঁদে বন্ধুত্ব পাতানো যেতে পারে। সেটা দেউলে হবার রাস্তা। সেরকম মহাজনরা আজও এই গরিব জাতের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ায়। ইতিহাসে দেখা গেছে, প্রবলের সঙ্গে অসমকক্ষের মিতালি খাল কেটে কুমির ডেকে আনা। তাতে কুমিরের পেট ভরে অবিবেচক খাল-কাটিয়ের খরচায়। তা ছাড়া অমঙ্গল-প্রতিরোধের যোগ্য জনমনঃশক্তি বহু কালের অব্যাবহারে গিয়েছে মরচে পড়ে। ভরসা হারিয়েছে। কোনো-একটা নেশার ঝেকে মরিয়া হয়ে যদি ভরসা বাঁধি বুকে, তবে সে গিয়ে দাঁড়াবে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লায়। একদিন ছিল যখন সাহস ও বাহুবলের যোগে চলত লড়াই। এখন এসেছে সায়ান্স, শিক্ষিত বুদ্ধির ’পরে ভর করে। শুধু বুদ্ধি নয়, তার প্রধান সহায় প্রভূত অর্থবল। অথচ আমাদের লড়তে হবে শূন্য তহবিল এবং এমন জনসংঘ নিয়ে যাদের মন কর্মবিধানে দৃঢ় নয়, যারা অশাসিত— যাদের শক্তি হয় অচেতন হয়ে থাকে নয় অন্ধ হয়ে ছোটে। দেশের পলিটিকসের আরম্ভ হয়েছিল এই দুরূহ সমস্যা নিয়ে। সেইজন্যে প্রথম যুগের নেতারা অগত্যা নৌকো বানিয়েছিলেন দরখাস্তের পার্চমেণ্ট দিয়ে। সেটা দাঁড়িয়েছিল খেলায়। এই রিক্ততার সমস্যা নিয়েই একদিন মহাত্মা এসে দাঁড়ালেন বিপুল শক্তিমান প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে; দুঃখ সয়েছিলেন, মাথা হেঁট করেন নি। বিনা