পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রলয়ের সৃষ্টি
৩৯৯

 পৃথিবীতে প্রচণ্ডের মধ্যে, সংঘাতের মধ্যে, শান্তির যে অভ্যুদয় দেখি আদিযুগে, তাই দেখি আজ মানুষের ইতিহাসেও। উদ্দাম নিষ্ঠুরতা আজ ভীষণাকার মৃত্যুকে জাগিয়ে তুলছে সমুদ্রের তীরে তীরে; দৈত্যেরা জেগে উঠছে মানুষের সমাজে, মানুষের প্রাণ যেন তাদের খেলার জিনিস। মানুষের ইতিহাসে এই দানবিকতাই কি শেষ কথা? মানুষের মধ্যে এই-যে অসুর এই কি সত্য? এই সংঘাতের অন্তরে অন্তরে কাজ করছে শাস্তির প্রয়াস সে কথা বুঝতে পারি যখন দেখি, এই দুঃখের দিনেও কত মহাপুরুষ দাঁড়িয়েছেন শান্তির বাণী নিয়ে— সেজন্য মৃত্যুকে পর্যন্ত স্বীকার করেছেন। এঁদের সংখ্যা বেশি নয়, সাম্রাজ্যলুব্ধরা এঁদের হিংসা করে মারে— তবু এঁদের শক্তিকে নিঃশেষ করতে পারে না। এখনো মানুষ বিপদকে স্বীকার করেও দূর ভবিষ্যতের বাণী বহন করে চলেছে। অকুতোভয়ে। সত্য এখানেই। আজ চীনে কত শিশু নারী, কত নিরপরাধ গ্রামের লোক দুর্গতিগ্রস্ত— যখন তার বর্ণনা পড়ি হৃৎকম্প উপস্থিত হয়। আজ এই সংগীতমুখর শান্ত প্রভাতে আমরা যখন উৎসবে যোগ দিয়েছি এই মুহূর্তেই চীনে কত লোকের দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হচ্ছে—পিতার কাছ থেকে পুত্রকে, মাতার কাছ থেকে সন্তানকে, ভাইয়ের কাছ থেকে ভাইকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাচ্ছে, যেন মানুষের প্রাণের কোনো মূল্য নেই— সে। কথা চিন্তা করলেও ভয় হয়। অপর দিকে আছে আপন-সাম্রাজ্য-লোভী ভীরুর দল, তারা এই দানবদের কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস করে না। ক্ষীণ এরা, ইতিহাসে এদের স্বাক্ষর লুপ্ত। চীনকে যখন জাপান অপমান করেছে সিনেমার ভিতর দিয়ে, সাহিত্যের ভিতর দিয়ে— যেমন অপমান আমাদের দেশেও হয়ে থাকে— তখন এই প্রতাপশালীর দল কোনো বাধা দেয় নি, বরং চীনকে দাবিয়ে দিয়েছে, বলেছে চীনের চঞ্চল হবার কোনো অধিকার নেই। আমাদের দেশেও দেখি, দুর্বলকে অবমাননার কোনো প্রতিকার নেই। তবুও এ কথা বলব, যারা আজ দুঃখ পাচ্ছে, প্রাণ