পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আরোগ্য

আমি আশ্রমে উপস্থিত আছি অথচ ৭ই পৌষের উৎসবের আসন গ্রহণ করতে পারি নি, এরকম ঘটনা আজ এই প্রথম ঘটল। আমার বার্ধক্য এবং আমার রোগের দুর্বলতা আমাকে সমস্ত বহির্বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আজ আমার সেই দূরত্ব থেকে তোমাদের যদি কিছু বলি তো সংক্ষেপে বলব। কেননা বাহিরের কোনো কাজে অধিকক্ষণ মনোযোগ দিতে আমার নিষেধ আছে, কেবল যে ডাক্তারের তা নয়, আমার রোগজীর্ণতারও।

 যৌবনের তেজ যখন প্রখর ছিল, ভাবতুম, বার্ধক্যটা একটা অভাবাত্মক দশা, অর্থাৎ ক্রমে ক্রমে সমস্ত শক্তি হ্রাস হয়ে সেই দশা মৃত্যুর সূচনা করে। কিন্তু আজ আমি এর ভাবাত্মক দিক ক্রমশ উপলব্ধি করতে পারছি। সত্তার যে বহিরঙ্গ, যাকে আমরা অহং নাম দিতে পারি, তার থেকে শ্রদ্ধা ক্রমশ শিথিল হয়ে আসছে। ঠিক মনে হচ্ছে, যেমন পরিণত ফল তার বাহিরের খোসাতে আর আসক্ত হয়ে থাকে না, সেই খোসাটা ক্রমশ তার পক্ষে নিরর্থক হয়ে ওঠে। তখন তার প্রধান সম্পদ হয় ভিতরের শস্য। কাঁচা অবস্থায় সেই শস্যের পরিণত রূপ সে অনুভব করতে পারে না, এইজন্যে তাকে বিশ্বাস করে না। তখন সে আপনার বাহিরের পরিচয়েই বাহিরে পরিচিত হতে চেষ্টা করে, সেখানে কোনো আঘাত পেলে সে পরম ক্ষোভের বিষয় বলে মনে করে। বৃদ্ধ বয়সে তার বিপরীত দশা ঘটে। সে অন্তরের পূর্ণতার মধ্যে আপনাকে যত উপলব্ধি করতে পারে ততই একটা পরম আশ্বাস লাভ করে এবং ততই বাহিরের ক্ষতি অথবা অসম্মান তাকে আর ক্ষুব্ধ করতে পারে না। এ কথা কেউ যেন না মনে করে, এটা একমাত্র বৃদ্ধ বয়সেরই অধিকারগত। বস্তুত অল্প বয়সে আমরা