পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আরােগ্য
৪০৫

উত্তীর্ণ করতে পারে, কারণ মানবের ধর্ম: পরস্পর প্রীতির মিলন, ব্যবহারে কল্যাণ ও শান্তিকে অক্ষুন্নভাবে স্বীকার করা। আমি এই কামনা করি, আমাদের পিতামহের মর্মস্থান থেকে উচ্চারিত এই বাণী আমাদের প্রত্যেকের ধ্যানমন্ত্র হয়ে জগতে শান্তির দৌত্য করতে থাক্।

 যে সমাজ আত্মার পরিবর্তে বহির্বিষয়কে একান্ত প্রাধান্য দেয়, সে আপন লোভের সঞ্চয় দিয়ে অন্যকে আঘাত করে এবং সেই লোভের সঞ্চয়ই তার ফিরে আঘাতের বিষয় হয়। এই আঘাত-প্রত্যাঘাতের কোনোদিন কোথাও অন্ত দেখা যায় না। শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে সে এই লোভের দুর্গকে দৃঢ়তর করতে থাকে, পরাস্ত হলে দৃঢ়তর প্রয়াসে তার অনুসরণ করতে থাকে। তখন পৃথিবীর যে-সকল জাতি বাহুবলে তার সমান নয় তাদের স্বাধীন কৃতার্থতার পথ অবরুদ্ধ করে ফেলে। এই লোভরিপুপ্রধান সভ্যতা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকে হেয় করে রাখবার পেষণযন্ত্র হয়ে থাকে, কারণ লোভ প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করতে পারে না। এরকম সভ্যতাকে সভ্যতা নাম দেওয়া যায় না, কেননা সভ্যতা সর্বমানবের সম্পদ। অদ্যকার মহাযুদ্ধের অধিনায়কদের অন্তত এক পক্ষ বলে থাকেন, তারা সমস্ত মানবের জন্য লড়াই করছেন। কিন্তু নিজেদের গণ্ডির বাহিরের মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করে না, উদ্ধত লোভরিপুর এই লক্ষণ। কেননা, আত্মা যাদের মুখ্য লক্ষ্য নয় আত্মীয়তার বোধসীমা তাদের কাছে সংকীর্ণ। মানুষের সম্বন্ধে অদ্বৈতবুদ্ধি অর্থাৎ অখণ্ড মৈত্রী তাদের কাছে শ্রদ্ধা পায় না। মনে রাখতে হবে, একদিন এই মৈত্রী প্রচার করবার জন্য সেদিনকার বুদ্ধভক্ত ভারত প্রাণান্ত স্বীকার করেও দেশে বিদেশে অভিযান করেছিল, পরসম্পদকে আত্মসাৎ করবার জন্য নয়।

 পাশ্চাত্য-অলংকার-মতে মহাকাব্য যুদ্ধমূলক। মহাভারতের আখ্যান ভাগেরও অধিকাংশ যুদ্ধবর্ণনার দ্বারা অধিকৃত কিন্তু যুদ্ধেই তার পরিণাম নয়। নষ্ট ঐশ্বর্যকে রক্তসমুদ্র থেকে উদ্ধার করে পাণ্ডবের হিংস্র