পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
কালান্তর

জলটাকে গায়ের জোরে আণ্ডামানে পাঠাইতে পারিলেই তাদের পক্ষে লঙ্কার ধোঁয়াটাকে মনােরম করা যায়। এইটেই তাে বিশ্ববিধানের প্রতি অবিশ্বাস, নিজের বিশেষ বিধানের প্রতি ভরসা। এর মূলে ছছাটো ভয়, কিম্বা ছােটো লােভ, কিম্বা কাজকে সােজা করিবার অতি ছােটো চাতুরী। আমরাও অন্ধ ভয়ের তাড়ায় মনুষ্যধর্মটাকে বিসর্জন দিতে রাজি। ব্যতিব্যস্ত হইয়া, যেখানে যা-কিছু আছে এবং নাই সমস্তকেই জোড়হাত করিয়া মানিতে লাগিয়াছি। তাই আমরা জীববিজ্ঞান বা বস্তুবিজ্ঞানই পড়ি, আর রাষ্ট্রতন্ত্রের ইতিহাসে পরীক্ষাই পাস করি, ‘কর্তার ইচ্ছা কর্ম’ এই বীজমন্ত্রটাকে মন হইতে ঝাড়িয়া ফেলিতে পারি না। তাই, যদিচ আমাদের এ কালের ভাগ্যে দেশে অনেকগুলি দশের কাজের পত্তন হইয়াছে, তবু আমাদের সে কালের ভাগ্যে সেই দশের কাজ একের কাজ হইয়া উঠিবার জন্য কেবলই ঠেলা মারিতে থাকে। কোথা হইতে খামকা একটা-না-একটা কর্তা ফুঁড়িয়া ওঠে। তার একমাত্র কারণ, যে দশের কথা হইতেছে তারা ওঠে বসে, খায় দায়, বিবাহ ও চিতারােহণ করে এবং পরকালে পিণ্ড লইতে হাত বাড়ায় কর্তার ইচ্ছায়; কিসে পাপ, কিসে পুণ্য, কে ঘরে ঢুকিলে হুঁকার জল ফেলিতে হইবে, ক’হাত ঘেরের কুয়ার জলে স্নান করা যায়, ভােক্তার ধর্মরক্ষার পক্ষে ময়রার হাতের লুচিরই বা কী গুণ রুটিরই বা কী, স্নেচ্ছের তৈরি মদেরই বা কী আর স্নেচ্ছের ছোঁওয়া জলেরই বা কী— কর্তার ইচ্ছার উপর বরাত দিয়া সে বিচার তারা চিরকালের মতাে সারিয়া রাখিয়াছে। যদি বলি পানিপাঁড়ে নােংরা ঘটি ডুবাইয়া যে জল বালতিতে লইয়া ফিরিতেছে সেটা পানের অযােগ্য, আর পানিমিঞা ফিল্টার হইতে যে জল আনিল সেটাই শুচি ও স্বাস্থ্যকর, তবে উত্তর শুনিব, ওটা তাে তুচ্ছ যুক্তির কথা, কিন্তু ওটা তাে কর্তার ইচ্ছা নয়। যদি বলি ‘নাই হইল কর্তার ইচ্ছা’ তবে নিমন্ত্রণ বন্ধ— শুধু অতিথিসৎকার নয়, অন্ত্যেষ্টিসৎকার পর্যন্ত অচল। এত নিষ্ঠুর জবদস্তি দ্বারা যাদের অতি