পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
কালান্তর

মানুষ জন্মেন যাঁরা সকল মানুষের প্রতিনিধি— যাঁরা সকলের দুঃখকে আপনি বহেন, সকলের পথকে আপনি কাটেন, যাঁরা সমস্ত বিরুদ্ধতার মধ্যেও মনুষ্যত্বকে বিশ্বাস করেন এবং ব্যর্থতার গভীরতম অন্ধকারের পূর্বপ্রান্তে অরুণোদয়ের প্রতীক্ষায় জাগিয়া থাকেন। তারা অবিশ্বাসীর সমস্ত পরিহাসকে উপেক্ষা করিয়া জোরের সঙ্গে বলেন: স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ। অর্থাৎ, কেন্দ্রস্থলে যদি স্বল্পমাত্রাও ধর্ম থাকে তবে পরিধির দিকে রাশি রাশি ভয়কেও ভয় করিবার দরকার নাই। রাষ্ট্রতত্ত্বে নীতি যদি কোনোখানেও থাকে তবে তাহাকেই নমস্কার, ভীতিকে নয়। ধর্ম আছে, অতএব মরা পর্যন্ত মানিয়াও তাহাকে মানিতে হইবে।

 মনে করো, ছেলের শক্ত ব্যামো। সেজন্য দূর হইতে স্বয়ং ইংরেজ সিভিল সার্জনকে আনিয়াছি। খরচ বড়ো কম করি নাই। যদি হঠাৎ দেখি, তিনি মন্ত্র পড়িয়া মারিয়া-ধরিয়া ভূতের ওঝার মতো বিষম ঝড়াঝুড়ি শুরু করিলেন, রোগীর আত্মাপুরুষ ত্রাহি-ত্রাহি করিতে লাগিল, তবে ডাক্তারকে জোর করিয়াই বলিব, ‘দোহাই সাহেব, ভূত ঝাড়াইবেন না, চিকিৎসা করুন।’ তিনি চোখ রাঙাইয়া বলিতে পারেন, তুমি কে হে! আমি ডাক্তার, যাই করি-না তাই ডাক্তারি।’ ভয়ে যদি বুদ্ধি দমিয়া না যায় তবে তাকে আমার এ কথা বলিবার অধিকার আছে, যে ডাক্তারিতত্ত্ব লইয়া তুমি ডাক্তার, আমি তাকে তোমার চেয়ে বড়ো বলিয়াই জানি, তার মূল্যেই তোমার মূল্য।’

 এই-যে অধিকার এর সকলের চেয়ে বড়ো জোর ঐ ডাক্তারসম্প্রদায়েরই ডাক্তারিশাস্ত্রে এবং ধর্মনীতির মধ্যে। ডাক্তার যতই আস্ফালন করুক, এই বিজ্ঞান এবং নীতির দোহাই মানিলে লজ্জা না পাইয়া সে থাকিতেই পারে না। এমন-কি, রাগের মুখে সে আমাকে ঘুষিও মারিতে পারে, কিন্তু তবু আস্তে আস্তে আমার সেলাম এবং সেলামিটি পকেটে করিয়া গাড়িতে বসার চেয়ে এই ঘুষির মূল্য বড়ো। এই ঘুষিতে সে