পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
কালান্তর

অন্তর্গঢ় সমস্ত শুভচেষ্টা নির্ভুক্ত হইতে পারে না। দেশব্যাপী নিত্যকর্মের মধ্যেই মানুষের বিচিত্র শক্তি বিচিত্রভাবে সফল হয়। নতুবা তার অধিকাংশই বদ্ধ হইয়া আন্তরিক নৈরাশ্যের উত্তাপে বিকৃত হইতে থাকে। এই বিকার হইতে দেশে নানা গোপন উপদ্রবের সৃষ্টি। এইজন্য দেখা যায়, দেশের ধর্মবুদ্ধি ও শুভচেষ্টার প্রতিই কর্তৃপক্ষের সন্দেহ সুতীব্র। যে লোক স্বার্থপর বেইমান, যে উদাসীন নিশ্চেষ্ট, বর্তমানের গুপ্ত ব্যবস্থায় তারই জীবনযাত্রা সকলের চেয়ে নিরাপদ, তারই উন্নতি ও পুরস্কারের পথে সকলের চেয়ে বাধা অল্প। নিঃস্বার্থ পরহিতৈষিতার জবাবদিহি ভয়ংকর হইয়াছে। কেননা, সন্দিগ্ধের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন যে ‘মহৎ অধ্যবসায়ে তোমার দরকার কী- তুমি খাইয়া দাইয়া বিয়া-থাওয়া করিয়া আপিসে আদালতে ঘুরিয়া মোটা বা সরু মাহিনায় যখন স্বচ্ছন্দে দিন কাটাইতে পারো তখন ঘরের খাইয়া বনের মোষ তাড়াইতে যাও কেন’। বস্তুত কর্তৃপক্ষ জানেন, এই আলো এবং ঐ ধোঁওয়া একই কারণ হইতে উঠিতেছে। সে কারণটা, নিস্ক্রিয়তার অবসাদ হইতে দেশের শুভবুদ্ধির মুক্ত হইবার চেষ্টা। যুক্তিশাস্ত্রে বলে, পর্বতে বহ্নিমান্ ধূমাৎ। গুপ্তচরের যুক্তি বলে, পর্বতো ধূমবান্ বহ্নেঃ কিন্তু যাই বলুক আর যাই করুক, মাটির তলায় ঐ-যে দারুণ সুড়ঙ্গপথ খোলা হইল, যেখানে আলো নাই, শব্দ নাই, বিচার নাই, নিষ্কৃতির কোনো বৈধ উপায় নাই, এইটেই কি সুপথ হইল? দেশের ব্যাকুল চেষ্টাকে বিনা বাছনিতে এক দমে কবরস্থ করিলে তার প্রেতের উৎপাতকে কি কোনোদিন শান্ত করিতে পারিবে? ক্ষুধার ছটফটানিকে বাহির হইতে কান-মলা দিয়া ঠাণ্ডা করিয়া চিরদুর্ভিক্ষকে ভদ্র আকার দান করাই যে যথার্থ ভদ্রনীতি এমন কথা তো বলিতে পারিই না, তাহা যে বিজ্ঞনীতি তাহাও বলা যায় না।

 এইরকম চোরা উৎপাতের সময় সমুদ্রের ও-পার হইতে খবর আসিল, আমাদিগকে দান করিবার জন্য স্বাধীন শাসনের একটা খসড়া