পাতা:কালিদাস - রাজেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SEO কালিদাস । ১. এক দিকে,-তেজস্বী ঋষি পুত্ৰ, পৃথিবী-পতির সম্মুখে দাড়াইয়া, অকুতোভয়ে ও সরল-প্ৰাণে বলিতেছেন—“আমি যাই, নিঃস্ব আপনি, আপনার নিকটে কাল-ক্ষেপে লাভ কি ?”-ঋষিতনয়ের নবীন হৃদয় সংসারের ছল-কৌশলে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ, প্রকৃত ব্ৰাহ্মণের হৃদয় যেমন হওয়া উচিত, ঠিক তদ্রুপ । ‘তুমি সসাগরা পৃথিবীর অধিপতি হইতে পাের, কিন্তু তাহাতে আমার কি ? তোমার নিকটে আত্ম-গোপন করিব কেন ? আমি প্ৰাণ-পাত করিয়া বিদ্যাৰ্জন করিয়াছি, এখন দক্ষিণা-দানের প্রয়োজন, আমি নিঃস্ব, তুমি ধনবান, আমি নিজের ভোগের জন্য প্ৰাৰ্থী নহি । গুরুদক্ষিণার প্রার্থী। তোমার নিকট আসিয়াছি, দাও ভাল, নচেৎ চলিয়া যাইব । ইহাতে কুণ্ঠার বিষয় কি ? আত্মার্থেই কুণ্ঠা জন্মে, পরার্থে কুণ্ঠ কিসের ?”—তাই ব্ৰাহ্মণযুবক অতি প্ৰাঞ্জল-ভাবে নিজের বক্তব্য জানাইলেন । জগৎপতির স্তুতিবাদের নামও করিলেন না । তখন ভারতে সত্য সত্যই ব্ৰাহ্মণ্যধৰ্ম্ম জীবিত ছিল, তাই কালিদাসের কৃপায় এ চিত্র আমরা দেখিলাম। দেখিয়া পূত হইলাম। অন্য দিকে,—আসমুদ্ৰ পৃথিবীর অধীশ্বর একটি ঋষি-তনয়ের আগমনে শশ-ব্যস্ত হইয়া, তঁহার শ্ৰীতি-সাধনে তৎ-পর। কি করিলে-র্তাহার সম্মান রক্ষা হইবে, এই চিন্তায় আকুল। সমাগত ব্ৰাহ্মণ-তনয়ের সম্মুখে, মহারাজ ভূত্যের ন্যায় আজ্ঞা-পালনােন্মুখ হইয়া দণ্ডায়মান। রাজা এবং মহারাজদিগের উপর, বনবাসী, নিঃস্ব, চরিত্রবান ব্ৰাহ্মণদিগের প্রভাব যে কতদূর ছিল, ইহা তাহারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।