এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ব্রাম্ভণী বলেন প্রভু কেন দুঃখ ভাব।
তোমারা থাকহ আমি সুখে তথা যাব।। তুমি যদি যাবে তথা একে হবে আর। একেবারে বজিবে সকল পরিবার।। আমি সহমৃতা হব তোমার মরণে। অনাথ হইবে কন্যা পুত্র দুইজনে।। তবে কদাচিত যদি রাখিব জীবন। কি শক্তি আমার শিশু করিতে পালন।। তোমা বিনা অনাথ হইব তিন জনে। অনাথের বেশী কষ্ট হবে দিনে দিনে।। দরিদ্র দেখিয়া তবে অকুলীন জন। এই কন্যা বরিবেক দিয়া কিছু ধন।। অল্পকালে এই পুত্র হইবে ভিক্ষুক। কুলধর্ম্ম আর বেদে হইবে বিমুখ।। বলিষ্ঠ দুর্ম্মুখ লোক কামে মুগ্ধ হবে। অনাথা দেখিয়া মোরে বলে আকর্ষিবে।। বিবিধ দুর্গতি হবে তোমার বিহনে। অনুচিত তোমার যাইতে সে কারণে।। অপত্য নিমিত্ত তুমি করিলে সংসার। পুত্র কন্যা দুই গুটি হ'য়েছে তোমার।। আমি বিনা গৃহস্থলী হবে আর বার। তোমার বিহনে সর্ব্ব হবে ছারখার।। ভার্য্যার পরম ধর্ম্ম স্বামীর সেবন। স্বামী বিনা অকারণ নারীর জীবন।। সঙ্কটে তারয়ে স্বামী দিয়া আপনাকে। ভুঞ্জয়ে অক্ষয় স্বর্গ যশ ইহলোকে।। তপ জপ যজ্ঞ ব্রত নানাবিধ দান। স্বামীর প্রসাদে হয় সর্ব্বত্র সম্মান।। সর্ব্ব ধর্ম্ম আছে ইথে শাস্ত্রেতে বিহিত। রাক্ষসের ঠাঁই আমি যাইব নিশ্চিত।। ব্রাম্ভণী এতেক যদি করিল উত্তর। গলে ধরি উচ্চৈঃস্বরে কান্দে দ্বিজবর।। স্বামীর ক্রন্দন দেখি কান্দয়ে ব্রাম্ভণী। মা বাপের দশা দেখি কন্যা বলে বাণী।। অনাথের প্রায় দোঁহে কান্দ কি কারণ। ক্রন্দন সংবর শুন মম নিবেদন।। রাক্ষসের ঠাঁই যদি জননী যাইবে। জননী বিচ্ছেদে এই বালক মরিবে।। পিণ্ডদান যাবে আর হবে কুলক্ষয়। সে কারণে মাতার যাইতে বিধি নয়।। জন্ম হৈলে কন্যারে অবশ্য ত্যাগ করে। বিধির নিয়ম ইহা কে খণ্ডিতে পারে।। দৈবেতে আমার পিতা অন্যে দিবে দান। এক্ষণে রাক্ষসে দিয়া দোঁহে হও ত্রাণ।। আমা হেন কত হবে তোমারা থাকিলে। সে কারণে মোরে দিয়া বঞ্চে কুতূহলে।। হইলে আমার পুত্র তারিবে পশ্চাতে। সম্প্রতি তরিয়া আমি যাইব নিশ্চিতে।। এতেক শুনিয়া কান্দে ব্রাম্ভণ ব্রাম্ভণী। তিন জনে গলাগলি কান্দে উচ্চধ্বনি।। এমত শুনিয়া পুত্র তিনের ক্রন্দন। মুখে হস্ত দিয়া করে সবারে বারণ।। রাক্ষসে মারিব এই বাড়ির প্রহারে। কোথা আছে দেখাইয়া দেহ দেখি তারে।। বালকের বচন শুনিয়া তিনজন। হাসিতে লাগিল তারা ত্যাজিয়া ক্রন্দন।। ক্রন্দন নিবৃত্ত দেখি ভোজের নন্দিনী। বলেন ব্রাম্ভণ প্রতি সকরুণ বাণী।। মৃতের উপরে যেন সুধা বরিষেণ। জিজ্ঞাসেন কুন্তীদেবী মধুর বচনে।। কি কারণে ক্রন্দন করহ তিনজন। জানিলে হইবে সাধ্য করিব মোচন।। দ্বিজ বলে যেই হেতু করি যে ক্রন্দন। মনুষ্যের শক্তি নাহি করিতে মোচন।। এই নগরেতে আছে বক নিশাচর। অত্যন্ত দুরন্ত সেই রাজ্যের ভিতর।। যক্ষ রক্ষ প্রেত ভূত পরচক্র ভয়। তার ভুজবল ইথে নাহিক সংশয়।। নগরের মধ্যে ইথে আছে যত নর। রাক্ষসের নির্ণয় করিল এই কর।। পায়স পিষ্টক যত শকটে পূরিয়া। এক নরবলি দেয় নিয়ম করিয়া।।