এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তে।।
যাহা ইচ্ছা কর শীঘ্র, না কর বিচার। সহজে তপস্বী দ্বিজ, কি শক্তি আমার।। শুনি যত সৈন্যগণ গলে দিল দড়ি। চালাইল কামধেনু পাছে মারে দড়ি।। প্রহারে পড়িল গাভী তবু নাহি যায়। ক্ষুব্ধমুখে সজলাক্ষে মুনি পানে চায়।। মুনি বলিলেন কিবা চাহ মম ভিতে। তোমার যতেক কষ্ট দেখি যে চক্ষেতে।। তপস্বী ব্রাম্ভণ আমি কি করিতে পারি। বলে তোমা ল'য়ে যায় রাজ্য-অধিকারী।। তবে রাজসৈন্যগণ বৎসকে ধরিয়া। আগে লৈয়া যায় তারে গলে দড়ি দিয়া।। বৎসকে ধরিয়া লয় কান্দয়ে নন্দিনী। ডাক দিয়া বলে হের দেখ মহামুনি।। মুনি বলিলেন তোমা ত্যাগ নাহি করি। বলে নিয়া যায় রাজা কি করিতে পারি।। নিজ শক্তিবলে যদি পার রহিবারে। তবে সে রহিতে পার কি কব তোমারে।। মুনিরাজ মুখে যদি এতেক শুনিল। অতি ক্রোধে ভয়ঙ্কর তনু বাড়াইল।। উর্দ্ধমুখ করি গাভী হাম্বা রবে ডাকে। নানাজাতি সৈন্য বাহিরায়ে লাখে লাখে।। পহ্লব নামেতে জাতি নানা অস্ত্র হাতে। পুচ্ছ হৈতে বাহির হৈল আচম্বিতে।। মুত্রেতে পাইল জন্ম বহু ব্যাধগণ। দুই পার্শ্বে জন্ম নিল কিরাত যবন।। জন্মিল অনেক সৈন্য মুখের ফেনেতে। নানাজাতি ম্লেচ্ছ হৈল চারিপদ হৈতে। নানা অস্ত্র লইয়া ধাইল সর্ব্বজন। দুই সৈন্য দেখাদেখি হৈল ভিড়ন।। বিশ্বামিত্র সৈন্যগণ যতেক আছিল। একজন প্রতি তার পঞ্চজন হৈল।। করিতে নারিল যুদ্ধ বিশ্বামিত্র সেনা। রাজার সম্মুখে ভঙ্গ দিল সর্ব্বজনা।। পড়িল অনেক সৈন্য রক্তে বহে নদী। মুনি সৈন্য রাজ সইন্য পাছে যায় খেদি।। পলায় সকল সৈন্য পাছে নাহি চায়। সর্ব্বসৈন্য বশিষ্ঠের পাছে খেদি যায়।। বনের বাহির করি গাধির কুমারে। বাহুড়িয়া সৈন্যগণ এল মুনি ঘরে।। তবে বিশ্বামিত্র বড় মনে অভিমান। মুনির নিকটে পেয়ে এত অপমান।। অদ্ভুত দেখিয়া কর্ম্ম মনে মনে গণে। সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ব্রাম্ভণ জানিনু এতক্ষণে।। ধিক ক্ষত্রজাতি মম ধিক রাজপদে। এই ত তপস্বী দ্বিজে না পারে বিবাদে।। এ জন্ম রাখিয়া আর কোন প্রয়োজন। এত চিন্তা করি মনে গাধির নন্দন।। দেশে পাঠাইয়া দিল যত সৈন্যগণ। তপস্যা করিতে গেল গহন কানন।। বিশ্বামিত্র তপ কথা অদ্ভুত কথন। যাঁর তপে তাপিত হৈল ত্রিভূবন।। গ্রীষ্মকালে চারিভিতে জালি হুতাশন। উর্দ্ধপাদে তার মধ্যে থাকেন রাজন।। নাকে মুখে রক্ত বহে ঘোর দরশন। অস্থিচর্ম্মসার মাত্র আহার পবন।। বরিষাকালেতে যথা জলদ বরিয়ে। যোগাসন করি রাজা তার মধ্যে বৈসে।। অহর্নিশি জলধারা বরিষে উপর। স্থাবর সদৃশ হৈয়া থাকে নৃপবর।। শীতকালে হীনবস্ত্র হৈয়া নিরাশ্রয়। হেমন্ত পর্ব্বতে যথা সদা বরিষয়।। এইরূপে করে তপ সহস্র বৎসর। তপে তুষ্ট হইলেন ব্রম্ভা তদুপর।। ব্রম্ভা বলে বর মাগ গাধির নন্দন। বিশ্বামিত্র বলে কর আমারে ব্রাম্ভণ।। বিরিঞ্চি বলেন তব ক্ষত্রকূলে জন্ম। কেমনে হইবে দ্বিজ দুষ্কর এ কর্ম্ম।। অন্য বর চাহ তুমি যেই লয় মনে। বিশ্বামিত্র বলে অন্যে নাহি প্রয়োজন।। ব্রম্ভা বলে আর জন্মে হইবে ব্রাম্ভণ। এক্ষণে যা চাহ তাহা মাগহ রাজন।।