এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
দেব্যুবাচ।--বরং বৃনুস্ব ভদ্রন্তে, যত্তে মনসি বর্ত্ততে।
শুনিয়া ধাইল জরাসন্ধ নরপতি। দোঁহাকার অস্ত্রে ইস্ত্র বিন্ধে শীঘ্রগতি।। নানা অস্ত্র কর্ণবীর করে বরিষণ। নিবারয়ে তাহা বৃহদ্রথের নন্দন।। প্রাণপণে ঘোর যুদ্ধ হৈল দোঁহাকার। ধনু এড়ি গদা লৈল মগধ কুমার।। গদাযুদ্ধে অধিক কুশল মহারথ। গদাঘাতে চুর্ণ সে করিল কর্ণরথ।। সারথি তুরঙ্গ রথ আদি চুর্ণ হৈল। লাফ দিয়া কর্ণবীর ভূমিতে পড়িল।। আর রথে চড়ি অস্ত্র করে বরিষণ। সেই রথ চূর্ণ তবে করিল তখন।। মার মার করিয়া ভীষণ ঘোর ডাকে। বায়ুবেগে গদা বীর ফিরায়ে মস্তকে।। মেঘের বর্ষণাধিক কর্ণ অস্ত্র এড়ে। গদায় ঠেকিয়া অস্ত্র ধূলি হৈয়া পড়ে।। হেনমতে কতক্ষণ হইল সমর। ক্রোধে দিব্য অস্ত্র কর্ণ এড়ে ধনুর্দ্ধর।। খণ্ড খণ্ড করি গদা কাটিয়া ফেলিল। আর গদা লৈয়া বীর কর্ণে প্রহারিল।। সেই গদা কাটি কর্ণ কৈল খান খান। আর গদা নিল পুনঃ মগধ প্রধান।। পুনঃ পুনঃ জরাসন্ধ যত গদা লয়। সেইক্ষণে কাটে তাহা সূর্য্যের তনয়।। বহু গদা কাটা গেল গদা নাহি আর। কর্ণ প্রতি বলে তবে মগধকুমার।। আমি অস্ত্রহীন তুমি হও অস্ত্রধারী। অস্ত্র ত্যাজি এস দোঁহে বাহুযুদ্ধ করি।। শুনি কর্ণ সেইক্ষণে এড়ি ধনুঃ শর। বাহু যুদ্ধ করে দোঁহে ভূমির উপর।। মুণ্ডে মুণ্ডে ভুজে ভুজে বুকে বুকে তাড়ি। চরনে চরণ বাঁধি যায় গড়াগড়ি।। পদাঘাত করাঘাত মুষ্টির প্রহার। চট্ চট্ শব্দ বাজে অঙ্গে দোঁহাকার।। কোথায় পড়িল রত্ন কণ্ঠহার ছিঁড়ে। মাথার মুকুট গেল চূর্ণ হ'য়ে উড়ে।। দঁহাকার সংগ্রাম যে না হয় বিরাম। পুর্ব্বে সীতা হেতু যেন রাবণ-শ্রীরাম।। সূর্য্যের নন্দন কর্ণ সূর্য্য-পরাক্রম। ক্রোধমূর্ত্তি দেখি যেন কালান্তক যম।। ভুজবলে জরাসন্ধ পড়িল ভূতলে। বুকে চাপি বসিয়া চাপিয়া ধরে গলে।। জরাসন্ধ-সঙ্কট দেখিয়া রাজগণ। হাহাকার করিয়া করিল নিবারণ।। হারি অপমান হৈয়া মগধের পতি। আপন দেশেতে গেল হৈয়া দুঃখমতি।। তবে ভানুমতী লৈয়া ভানুর নন্দন। দুর্য্যোধন অগ্রে লৈয়া দিল ততক্ষণ।। তুষ্ট হৈয়া দুই মিত্র করে কোলাকুলি। ভানুমতী লৈয়া গেল নিজ দেশে চলি।। মহাভারতের কথা অমৃত-সমান। কাশীরাম কহে সদা শুনে পুণ্যবান।। ------ শ্রীকৃষ্ণ-বলরামের কথোপকথন। জিজ্ঞাসেন জন্মেজয় কহ মুনিবর। তারপর কি করিল পাঞ্চাল-ঈশ্বর।। মুনি বলে অবধান কর নৃপমণি। পুনঃ পুনঃ রাজগণ বলে কটুবাণী।। উপহাস করিবারে নৃপতিমণ্ডলে। মিথ্যা সয়ংবর করি নিমন্ত্রি আনিলে।। আমা সবা মধ্যে বিন্ধে নাহি হেন জন। কহ বিন্ধিবারে তব যারে লয় মন।। রাজগণ বাক্য শুনি দ্রুপদকুমার। ডাকিয়া বলিল তবে মধ্যেতে সভার।। ক্ষত্রকুলে আছহ সভাতে যত জন। যে বিন্ধিবে তারে কৃষ্ণা করিবে বরণ।। পুনঃ পুনঃ ধৃষ্টদ্যুম্ন সবাকার আগে। এইমত বচন বলিল ক্ষত্রভাগে।। রাম দৃষ্টি করিলেন কৃষ্ণের বদন। ইঙ্গিতে বুঝিয়া বলিলেন নারায়ণ।। আমা সবাকার ইথে নাহি কিছু কাজ। অকারণে সভায় উঠিয়া পাব লাজ।।