পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রিসন্ধ্যাং প্রয়তো ভূত্বা যস্তিদং পঠতে সদা।।

 ইহা কেহ নাহি জানে অন্য রাজগণ।
 এ বিদ্যা পাইবে কোথা ভিক্ষুক ব্রাম্ভণ।।
 বিশেষ তোমারে যে করিল নমস্কার।
 ভরতবংশেতে জন্ম হয়েছে ইহার।।
 এক্ষণে বিদিত আর হবে মুহুর্ত্তেকে।
 কতক্ষণে লুকাইবে আর জ্বলন্ত পাবকে।।
 ভীষ্ম কহে আমি হৃদে তাই ভাবিতেছি।
 পূর্ব্বে আমি ইহারে কোথায় দেখিয়াছি।।
 নিরখিয়া ইহার সুচারু চন্দ্রমুখ।
 কহনে না যায় কত জন্মিতেছে সুখ।।
 কহ কহ গুরু যদি জানহ ইহারে।
 কেবা এ কাহার পুত্র কিবা নাম ধরে।।
 দ্রোণাচার্য্য বলেন কহিতে আমি পারি।
 কেহ পাছে শুনে ইহা দুষ্টলোকে ডরি।।
 বিশেষ অনেক দিন মরিল যে জনে।
 দৃঢ় করি তার নাম লইব কেমনে।।
 ভীষ্ম বলিলেন কহ কি ভয় তোমার।
 কে মরিল বহু দিন কি নাম তাহার।।
 দ্রোণ বলে যেই বিদ্যা করিল সভায়।
 পার্থ বিনা মম ঠাঁই কেহ নাহি পায়।।
 পূর্ব্বে আমি পার্থেরে করিলাম স্বীকার।
 শিষ্য না করিব কেহ সমান তোমার।।
 সেই হেতু এ বিদ্যা দিলাম ধনঞ্জয়ে।
 আমারে দিলেন যাহা ভৃগুর তনয়ে।।
 অশ্বত্থমা আদি ইহা কেহ নাহি জানে।
 তেঁই পার্থ বলি ইহা লয় মোর মনে।।
 পার্থের শুনিয়া কথা ভীষ্ম শোকাকুল।
 নয়নের জলে আর্দ্র হইল দুকুল।।
 কি বলিয়া আচার্য্য করিলা কোন কর্ম্ম।
 জ্বালিয়া নির্ব্বাণ অগ্নি দগ্ধ কৈলা মর্ম্ম।।
 দ্বাদশ বৎসর নাহি দেখি শুনি কাণে।
 আর কোথা পাইব সে সাধুপুত্রগণে।।
 এত বলি ভীষ্মদেব করেন ক্রন্দন।
 দ্রোণ বলিলেন ভীষ্ম ত্যাজ শোকমন।।
 পাণ্ডুপুত্র মরিয়াছে কহে সর্ব্বজন।
 সে কথায় আমার প্রত্যয় নাহি মন।।
 বিদুরের মন্ত্রণায় তাহে গেল তরি।
 এই কথা ভাবি আমি দিবস শর্ব্বরী।।
 হেন নীতি উক্ত আছে মুনিগণ বলে।
 পাণ্ডবের মরণ নাহিক মহীতলে।।
 এত শুনি ভীষ্মবীর ত্যাজিল ক্রন্দন।
 দুইজনে কল্যাণ করেন হৃষ্টমন।।
 যদ্যপি এ কুন্তীপুত্র হইবে ফাল্গুনী।
 লক্ষ্য বিন্ধি লবে এই দ্রুপদ-নন্দিনী।।
 তবে পার্থ প্রণমেন কৃষ্ণে যোড়হাতে।
 পাঞ্চজন্য শঙ্খবাদ্য হয় যেই ভিতে।।
 দেখিয়া কল্যাণ-বাক্য কহেন শ্রীপতি।
 হাসিয়া বলেন তবে বলভদ্র প্রতি।।
 অবধানে হের দেখ রেবতীবল্লভ।
 তোমারে প্রণাম করে তৃতীয় পাণ্ডব।।
 রাম বলিলেন পার্থ বিন্ধিবেক লক্ষ্য।
 কন্যা ল'য়ে যাইবারে না হইবে শক্য।।
 একা ধনঞ্জয় এত সমুহ বিপক্ষ।
 সসৈন্যেতে আসিয়াছে রাজা এক লক্ষ।।
 এই হেতু সবাই করিবে প্রাণপণ।
 কন্যা লাগি দ্বন্দ করিবেক রাজগণ।।
 বিশেষ ব্রাম্ভণ বলি পার্থে সবে জানে।
 এত লোকে কি করিবে পার্থ একজনে।।
 কৃষ্ণ বলে অন্যায় করিবে দুষ্টগণ।
 তুমি আমি রহিয়াছি কিসের কারণ।।
 মম বিদ্যমানে করিবেক বলাৎকার।
 জগন্নাথ নাম তবে কি হেতু আমার।।
 জগৎজনের আমি অন্তে হই ত্রাতা।
 দুর্ব্বলের বল আমি সর্ব্বফলদাতা।।
 যদি আমি সমুচিত ফল নাহি দিব।
 তবে কেন জগন্নাথ এ নাম ধরিব।।
 গোবিন্দের বাক্যে রাম চিন্তান্বিত মনে।
 অর্জ্জুনে আশীষ করে কৃষ্ণের বচনে।।
       ------
  অর্জ্জুনের লক্ষ্যবিদ্ধকরণ।
   প্রণাম করেন বীর ধর্ম্মের চরণে।
 যুধিষ্ঠির বলিলেন চাহি দ্বিজগণে।।