পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তস্য কণ্ঠে সদা বাসং করিষ্যামি ন সংশয়।

 লক্ষ্যবেধা ব্রাম্ভণ প্রণমে কৃতাঞ্জলি।
 কল্যান করহ তারে ব্রাম্ভণমণ্ডলী।।
 শুনি দ্বিজগণ বলে স্বস্তি স্বস্তি বাণী।
 লক্ষ্য ভেদী প্রাপ্ত হও দ্রুপদনন্দিনী।।
 ধনু লইয়া পাঞ্চালে বলেন ধনঞ্জয়।
 কি বিন্ধিব কোথা লক্ষ্য বলহ নিশ্চয়।।
 ধৃষ্টদ্যুম্ন বলে এই দেখহ জলেতে।
 চক্রছিদ্রপথে মৎস পাইবে দেখিতে।।
 কনকের মৎস তার মানিক নয়ন।
 সেই মৎসচক্ষু যে করিবে বিন্ধন।।
 সে হইবে বল্লভ আমার ভগিনীর।
 এত শুনি জলে দেখে পার্থ মহাবীর।।
 উর্দ্ধবাহু করিয়া আকর্ণ টানি গুণ।
 অধোমুখ করি বাণ ছাড়েন অর্জ্জুন।।
 সুদর্শন জগন্নাথ করেন অন্তর।
 মৎস-চক্ষু ভেদিলেক অর্জ্জুনের শর।।
 মহাশব্দে মৎস যদি হইলেক পার।
 অর্জ্জুনের সম্মুখে আইল পুনর্ব্বার।।
 আকাশে অমরগণ পুষ্পবৃষ্টি কৈল।
 জয় জয় শব্দ দ্বিজসভামধ্যে হৈল।।
 ভেদিল ভেদিল বলি হৈল মহাধ্বনি।
 শুনিয়া বিস্মিত হৈল যত নৃপমণি।।
 হাতেতে দধির পাত্র ল'য়ে পুষ্পমালা।
 দ্বিজেরে বরিতে যায় দ্রুপদের বালা।।
 দেখিয়া বিস্মিত হৈল যত নৃপমণি।
 ডাকিয়া বলিল রহ রহ যাজ্ঞসেনী।।
 ভিক্ষুক দরিদ্র এ সহজে হীনজাতি।
 লক্ষ্য ভেদিবারে ইহার কোথায় শকতি।।
 মিথ্যা গোল কি কারণে কর দ্বিজগণ।
 গোল করি কন্যা কোথা পাইবে ব্রাম্ভণ।।
 ব্রাম্ভণ বলিয়া চিত্তে উপরোধ করি।
 ইহার উচিত ফল সদ্য দিতে পারি।।
 পঞ্চক্রোশ উর্দ্ধে লক্ষ্য শূণ্যেতে আছয়।
 বিন্ধিছে কি না বিন্ধিছে কে জানে নির্ণয়।।
 বিন্ধিল বিন্ধিল বলি লোকে জানাইল।
 কহ দেখি কোথা মৎস কেমনে বিন্ধিল।।
 তবে ধৃষ্টদ্যুম্ন সহ বহু দ্বিজগণ।
 নির্ণয় করিতে করে জলে নিরীক্ষণ।।
 শিষ্টে বলে বিন্ধিয়াছে দুষ্টে বলে নয়।
 ছায়া দেখি কি প্রকারে হইবে প্রত্যয়।।
 শূণ্য হৈতে মৎস যদি কাটিয়া পড়িবে।
 সাক্ষাতে দেখিলে তবে প্রত্যয় জন্মিবে।।
 কাটি পাড় মৎস যদি আছয়ে শকতি।
 এইরূপ কহিলেক যতেক দুষ্টমতি।।
 শুনিয়া বিস্মিত হৈল পাঞ্চাল-নন্দন।
 হাসিয়া অর্জ্জুন বীর বলেন বচন।।
 অকারণে মিথ্যা দ্বন্দ কেন কর সবে।
 মিথ্যা কথা যে কহে সে কার্য্যে নাহি লভে।।
 কতক্ষণ জলের তিলক থাকে ভালে।
 কতক্ষণ রহে শিলা শূণ্যেতে মারিলে।।
 সর্ব্বকাল দিবস রজনী নাহি রয়।
 মিথ্যা মিথ্যা সত্য সত্য লোকে খ্যাত হয়।।
 অকারণে মিথ্যা বলি করিলে ভণ্ডন।
 লক্ষ্য কাটি পাড়িব দেখুক সর্ব্বজন।।
 যতবার কহিবে বিন্ধিব ততবার।
 হেনবাক্য বলি বীর সম্মুখে সবার।।
 ক্ষিপ্রহস্তে অর্জ্জুন নিলেক ধনুঃশর।
 আকর্ণ পূরিয়া ভেদিলেক দৃঢ়তর।।
 দেখিয়া বিস্ময় ভাবে সব রাজাগণ।
 জয় জয় শব্দ করে যতেক ব্রাম্ভণ।।
 হাতে দধিপাত্র মাল্য দ্রৌপদীসুন্দরী।
 পার্থের নিকট গেল কৃতাঞ্জলি করি।।
 দধি মাল্য দিতে পার্থ করেন বারণ।
 দেখি অনুমান করে যত রাজাগণ।।
 আকজন প্রতি আরজন দেখাইল।
 হের দেখ বরিতে ব্রাম্ভণ নিষেধিল।।
 সহজে দরিদ্র জীর্ণ বস্ত্র পরিধান।
 তৈল বিনা শিরে দেখ জটার আধান।।
 ধনরত্ন সহিত দ্রূপদ রাজা দিবে।
 এই হেতু বরিতে না দিল ধনলোভে।।
 ব্রম্ভতেজে লক্ষ্য ভেদিলেন তপোবলে।
 কি করিবে কন্যা তার অন্ন নাহি মিলে।।