পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব্ব।]
নারায়ণং নমস্কৃত্যং নরঞ্চৈব নরোত্ত্মম্।
১৯

জানিয়া শুনিয়া মিথ্যা বলে যেই জন।
ইহলোকে কুৎসা অন্তে নরকে গমন॥
উভয় সপ্তম কুল নরকে প্রবেশে।
জানিয়া আমারে শাপ দিলে কোন দোষে॥
মোর মুখে দিলে তৃপ্ত দেব পিতৃগণ।
অনুচিত শাপ মোরে দিলে কি কারণ॥
এত বলি বৈশ্বানর দেবগ্ণ লৈয়া।
ব্রম্ভারে সকল কথা নিবেদিল গিয়া॥
ব্রম্ভা বরে অগ্নি দুঃখ না ভাবিহ মনে।
সকল হইবে শুদ্ধ তোমার কারণে॥
ব্রম্ভার বচনে অগ্নি সন্তুষ্ট হইয়া।
পুনরাপি ত্রিজগতে ব্যাপিল আসিয়া॥


রুরুর সর্প হিংসা

সৌতি বলে অবধান কর মুনিগণ।
হেনমতে ভৃগুপুত্র হইল চ্যাবন॥
প্রমতি নামেতে হইল চ্যাবন-তনয়।
তাহার তনয় হৈল রুরু-মহাশয়॥
প্রমদ্বারা ভার্য্যা তার পরমা সুন্দরী।
গর্ভে জন্ম হইল তার মেনকে অপ্সরী॥
কতকালে মৈল কন্যা সর্পের দংশনে।
দেখি শোকাকুল হৈল যত বন্ধুগণে॥
ভার্য্যার মরণশোকে প্রমতি-নন্দন।
একাকী অরণ্যমধ্যে করয়ে ক্রন্দন॥
মুনির ক্রন্দন দেখি যত দেবগণ।
পাথাইল দেবদূত প্রবোধ-কারণ॥
দেবদূত বলে রুরু কান্দ কি কারণে।
মরিল তোমার ভার্য্যা আয়ুর বিহনে॥
ইহার উপায় আর নাহিক ত্রিলোকে।
আছয়ে উপায় এক কহিব তোমাকে॥
আপন অর্দ্ধেক আয়ু যদি দেহ তারে।
তবে পাবে নিজ ভার্য্যা কহিনু তোমারে॥
অর্দ্ধ আয়ু দিব রুরু কৈল অঙ্গীকার।
জীউক যে ভার্য্যা মোর কর প্রতিকার॥

এত শুনি দেবদূত রুরুরে লইয়া।
যমের ভবনে গেল বিমানে চড়িয়া॥
যমেরে কহিল দূত সব বিবরণ।
অর্দ্ধ আয়ু স্ত্রীকে দিল প্রমতি-নন্দন॥
ধর্ম্মরাজ বলে পাবে তোমার কামিনী।
যাও যাও নিজালয়ে অহে দ্বিজমণি॥
ধর্ম্মবলে প্রমদ্বারা জীবন পাইল।
দেখিয়া প্রমতি-পুত্র সানন্দ হইল॥
প্রতিজ্ঞা করিল রুরু ক্রোধে ততক্ষনে।
মারিব ভুজঙ্গ যত দেখিব নয়নে॥
হাতে দণ্ড ভ্রমে রুরু সর্প অন্বেষণে।
মারিল অনেক সর্প না যায় গণনে॥
একদিন ভ্রমে মুনি অরন্য ভিতর।
দেখিলেন মহাসর্প অতি ভয়ঙ্কর॥
সর্প দেখি দণ্ড ল'য়ে যায় মারিবারে।
দেখিয়া ডুণ্ডুভ ডাকি কহে উচ্চৈঃস্ব্রে॥
কি দোষ করিনু আমি তোমার সদনে।
অহিংসক জনে মার কিসের কারণে॥
রুরু বলে দোষ গুন না করি বিচার।
সর্প পেলে সংহারিব প্রতিজ্ঞা আমার॥
ডুণ্ডূভ বলেন আমি না মাত্র সাপ।
অহিংসক হিংসনে জন্মায় মহাপাপ॥
এতেক শুনিয়া রুরু ভাবে মনে মন।
জিজ্ঞাসিল সর্প তুমি কোন্ মহজন॥
সর্প বলে পূর্ব্বে ছিনু মুনির কুমার।
চিত্রসেন নামে সখা ছিলেন আমার॥
তালপত্র এক সর্প করিয়া রচন।
সখারে দিলাম আমি হাস্যের কারণ॥
সর্প দেখি মোহ গেল মুনির তনয়।
ক্রোধ করি শাপ মোরে দিল অতিশয়॥
হীনবীর্য্য সর্প হয়ে থাকহ কাননে।
পুনরপি কহে মোরে করুণ বচনে॥
অচিরে হইবে মুক্ত শুন প্রাণসখা।
রুরু সহ যেই দিনে হবে তব দেখা॥
প্রমতির পুত্র তুমি ভৃগুবংশে জন্ম।
দ্বিজ হৈয়া কর কেন ক্ষত্রিয়ের কর্ম্ম॥