পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিরাশ্রয়ং মাং জগদীশ রক্ষ।।

 আশ্বাসিয়া নাগরাজ,    স্বসাকে জিজ্ঞাসা কাজ,
       কান্দ কেন হইয়া দুঃখিত।।
 ভ্রাতার বচন শুনি,     কহে গদগদ বাণী,
       আপনার যত বিবরণ।
 আবধান ক্র ভাই,      কিছু মোর দোষ নাই,
       মুনিরাজ ছাড়ি গেল বন।।
 নির্ঘাত সদৃশ বানী,     ভগিনীর বাক্য শুনি,
       নাগ হৈল বিষন্ন বদন।
 পূর্ব্বেতে মায়ের শাপে     সর্ব্বদা শরীর কাঁপে,
       অতি শীঘ্রজিজ্ঞাসে কারণ।।
 বলহ ভগিনী মোরে,     জিজ্ঞাসিতে লজ্জা করে,
       আপন জানহ সব কথা।
 মাতৃশাপে ভ্রাতৃগণে,      বড় ভয় ছিল মনে,
       উপায় করিয়া দিল ধাতা।।
 মুনিবীর্য্যে তব গর্ভে,     যেই পুত্রের উদ্ভব,
       নাগকুল করিবে সে ত্রাণ।
 তাহার কারণ তোরে,     চিরদিন রাখি ঘরে,
       জরৎকারে করিলাম দান।।
 না হইতে বংশধর,       চলিলেন মুনিবর,
       মাতৃশাপে সদা চিন্তে মন।
 জরৎকারী কহে শুনি,    যে যুক্তি বলিয়া মুনি,
       কাননেতে করিল গমন।।
 তোমার যতেক ভ্রাতৃ,    আমার যতেক পিতৃ,
       দুই কুল করিবে উদ্ধার।
 এতেক বলিয়া মোরে,    মুনি গেল দেশান্তরে,
       নিবারিয়া ক্রন্দন আমার।।
 ত্যাজ ভাই মনস্তাপ,     চিন্তা নাই মাতৃশাপ,
       কভু নহে মিথ্যা কহে মুনি।
 জরৎকার ইহা ব'লে,    কাননে গেলেন চলে,
       আনন্দে নাচয়ে সব ফণী।।
 উল্লাসিত নাগরাজা,     ভগিনীকে করে পূজা,
       নানারত্নে করিল ভূষিত।
 দিব্যবস্ত্র অলঙ্কার,       বহু ভক্ষ্য উপহার,
       সেবায় করিল নিয়োজিত।।
 তবে ভূজঙ্গমপতি,      বলে জরৎকারী প্রতি,
       কহ তুমি ইহার কারণ।
 কহ সত্য জরৎকারী,    কি দোষ তোমার হেরি,
       মুনিরাজ ছাড়ি গেল বন।।
 আমি তাঁরা ভাল জানি,  বড় উগ্র সেই মুনি,
       বিনা দোষে ত্যাজিয়াছে তোমা।
 তথাপি কি দেখি দোষ,   করিলেক এত রোষ,
       একা গৃহে ছাড়ি গেল রমা।।
 জরৎকারী বলে ভাই,    শুন তবে বলি তাই,
      আজিকার দিন অবসানে।
 শির দিয়া মোর উরে,   নিদ্রা গেল মুনিবরে,
      অস্ত গেল তপন গগনে।।
 সন্দ্যাভঙ্গ হউ মুনি,     মনে আমি ভয় গণি,
      জাগরণে পাছে-ক্রোধ করে।
 সন্ধ্যাহীন যেই দ্বিজ,     সর্প হেন হীনবীজ,
      এ কারণে জাগালাম তাঁরে।।
 জাগি রক্তমুখ কোপে,    দেখিয়া হৃদয় কাঁপে,
      বলে মোরা অবজ্ঞা করিলি।
 আমি সন্ধ্যা না করিতে,   সন্ধ্যা যাবে কোন্
      মতে, সন্ধ্যা ডাকিল ইহা বলি।।
 সন্ধ্যা মনে ভয় পাই,     বলে আমি নাহি যাই,
      আছি যে তোমার উপরোধে।
 সন্ধ্যার বচন শুনি,      ত্যাগ করি গেল মুনি,
      এই মাত্র মম অপরাধ।।
 মুনির বচন শুনি,       বিস্ময় মানিল ফণী,
      ভগিনীকে তোষে মৃদুভাষে।
 যদ্যপি গিয়াছে দ্বিজ,     দুঃখ না ভাবিও নিজ,
     থাক গৃহে পরম সন্তোষে।।
 সহস্রেক সহোদর,        আর যত অনুচর,
     সহস্রেক বধূর সহিত।
 সেবিবে তোমার পায়,     সর্ব্বদা ঈশ্বরীপ্রায়,
      মোর গৃহে থাক গো সতত।।
 এত বলি ফণীবর,        ডাকি সব সহোদর,
      নিয়োজিল তাঁহার সেবনে।
 হেনমতে জরৎকারী,      সর্ব্ব দুঃখ পরিহরি,
        রহিলেন ভ্রাতার সদনে।।
 গর্ভ বাড়ে দিবানিশি,     শুক্লপক্ষে যেন শশী,
       প্রসবিল কালের সংযোগে।