এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মায়ামৃগং দয়িতরেপ্সিত-মন্ব্ধাবিদ্,
বিনা অপরাধে বাপে কৈল ভস্মরাশি। পিতৃবৈরী মারতে বাধক হৈল আসি।। এই হেতু ক্রোধ মনে হতেছে আমার। নিজ দুঃখ নিবেদিনু অগ্রেতে তোমার।। ব্যাসদেব বলে ধৈর্য্য ধর নরপতি। ক্রোধে ধর্ম্ম নাশ করে বিনাশে ভূপতি।। ব্রাম্ভণেরে ক্রোধ রাজা কর অকারণ। ভবিতব্য ক্ষণ্ডন না হয় কদাচন।। তোমার পিতার জন্মে হইল যখন। গণিয়া কহিল যত শাস্ত্রবিদ্ জন।। নানা যজ্ঞ ধর্ম্ম করিবেন অপ্রমিত। ভুজঙ্গ দংশনে মৃত্যু হইবে নিশ্চিত।। আমার বচনে স্থির হও গুণাধার। পিতা হেতু দুঃখ চিন্তা না করিহ আর।। কে খণ্ডাইতে পারে রাজা দৈবের নির্বন্ধ। না বুঝিয়া করিতেছ বিপ্র সহ দ্বন্দ্ব।। ব্যাসের মুখেতে রাজা শুনিয়া বচন। ভাবিয়া কুশ-হিংসা কৈল নিবারণ।। মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস কহে শুনে পূণ্যবান।।
--------
জনমেজয়ের অশ্বমেধ যজ্ঞারম্ভ।
রাজা বলে অকারণে করিলাম এত। কোটি অহিংসক সর্প করিলাম হত।। এ পাপ নরক হৈতে নাহিক নিস্তার। কহ মুনি ইহাতে কিমতে হ'ব পার।। জ্ঞাতিবধ করে পূর্ব্বে পিতামহগণ। অশ্বমেধ করি পাপে হইল মোচন।। আমিও করিব সেই বাজিমেধ যজ্ঞ। শুনি নিষেধিল ব্যাস সকল শাস্ত্রজ্ঞ।। পারব না জানি সবে, নিষেধ করিল। নিশ্চয়ই করিব যজ্ঞ, এই কলিকালে।। মুনি বলে ক্ষম তুমি সকল কর্ম্মেতে। বাজিমেধ নহে রাজা এ কলিযুগেতে।। মাংসশ্রাদ্ধ সন্ন্যাস গোমেধ অশ্বমেধ। দেবর হইতে পুত্র কলিতে নিষেধ।। অবশ্য করিব যজ্ঞ বলে মহারাজ। মোর বিগ্ন করিতে কে আছে ক্ষিতিমাঝ।। মুনি বলে করহ যে তব মনে লয়। কিমতে কহিব আমি বেদে নাহি কয়।। এত বলি মুনিরাজ হৈল অন্তর্দ্ধান। ভূপতি কহিল তবে যজ্ঞের বিধান।। যজ্ঞ-অশ্ব নিয়োজিল সেনাপতিগণ। বহু দেশ-দেশান্তর করিল ভ্রমণ।। সম্পূর্ণ বৎসর অশ্ব পৃথিবী ভ্রমিল। যত রাজাগণ বলে জিনিয়া আনিল।। যত মুনি দ্বিজগণ ছিল ভূমণ্ডলে। নিমন্ত্রন করিয়া আনিল যজ্ঞস্থলে।। বপুষ্টমা রাণী সহ আছে নৃপবর। অসিপত্র ব্রত আচারিয়া সংবৎসর।। হইল বৎসর পূর্ণ চৈত্র পূর্ণিমাতে। কাটিয়া তুরঙ্গ রাজা ফেলিল অগ্নিতে।। দ্বিজগণ বেদশব্দে পুরিল গগন। শূণ্যমণ্ডলেতে থাকি দেখে দেবগণ।। অশ্বমেধ পূর্ণ হয় কলিযুগ মাঝ। বেদনিন্দা ভয়েতে কম্পিত দেবরাজ।। কাটামুণ্ড অশ্বের যে আছিল বিশেষ। মায়াবলে ইন্দ্র তাহে করিল প্রবেশ।। সভামধ্যে নৃত্য করে তুরংএর মুণ্ড। দেখিয়া আশ্চর্য্য বড় হৈল সভাখণ্ড।। রাণীসহ ভূপতি আছয়ে সভামাঝ। নাচে মুণ্ড সভামাঝে পাইলেক লাজ।। যতেক সভার লোক অধোমুখ হৈল। ব্রাম্ভণ কুমার এক হাসিয়া উঠিল।। পুনঃ পুনঃ তালি মারে হাসে খল খল। দেখিয়া হইল রাজা জ্বলন্ত অনল।। রাজার সম্মুখে ছিল খড়গ খরশান। দ্বিজপুত্রে কাটিয়া করিল দুই খান।। হাহাকার শব্দ হৈল যজ্ঞের শালায়। চতুর্দ্দিকে দ্বিজগণ পলাইয়া যায়।।