পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃণালয়াত-সংস্পর্শ-দশবাহু-সমন্বিতাং।।

 কতদিনে দবযানী শর্মিষ্ঠা লইয়া।
 সহস্রেক দাসীগণ সঘতি করিয়া।।
 চৈত্ররথ নামে বন অতি মনোহর।
 নানা রঙ্গে ক্রীড়া করে তাহার ভিতর।।
 কেহ নাচে কেহ গায় কেহ দেয় তালি।
 মায়া বিদ্যারম্ভে কেহ দেয় হুলাহুলি।।
 কিশলয়-শয্যায় শয়ানা দেবযানী।
 পদসেবা করে তার দৈত্যের নন্দিনী।।
 হেনকালে সেই বনে দৈবের ঘটন।
 যযাতি নৃপতি আইল শিকার কারণ।।
 কন্যাকে দেখিয়া জিজ্ঞাসিল নৃপমণি।
 কি নাম ধরহ তুমি কাহার নন্দিনী।।
 এত শুনি দেবযানী করিলা উত্তর।
 দৈত্যগুরু শুক্র নাম খ্যাত চরাচর।।
 তাঁহার তনয়া আমি নাম দেবযানী।
 শর্মিষ্ঠা আমার সখী দৈত্যের নন্দিনী।।
 কি নাম ধরহ তুমি কাহার নন্দন।
 এথাকারে এলে তুমি কোন্ প্রয়োজন।।
 শুনিয়া কন্যার বাক্য কহেন নৃপতি।
 নাহুষ নন্দন আমি নামেতে যযাতি।।
 ব্রম্ভচর্য্যশীল আমি বিখ্যাত সংসারে।।
 মৃগয়া কারণ আমি আইনু এধারে।।
 দেবযানী বলে রাজা তুমি মহাতেজা।
 ব্রম্ম্ভচর্য্য বিজ্ঞ তুমি ধর্ম্মশীল রাজা।।
 পূর্ব্বে কূপ হৈতে তুমি তুলিলা আমারে।
 পুরুষ হইয়া তুমি ধরিয়াছ করে।।
 এক্ষণে আমারে কর বিবাহ ভূপতি।
 সহস্রেক দাসী পবে শর্মিষ্ঠা সংহতি।।
 তোমার বংশেতে কেহ বিবাহ না করে।
 হাত ধরি ল'য়ে যাব কন্যা সেই বরে।।
 এক্ষণে আমার হস্ত ধরি লহ তুমি।
 স্বেচ্ছায় তোমারে রাজা বরিলাম আমি।।
 রাজা বলে শুক্র জানি তপকল্পতরু।
 ব্রাম্ভণের শ্রেষ্ঠ আর দৈত্যগণ গুরু।।
 তাঁহার নন্দিনী তুমি বন্দিতা আমার।
 সে কারণে যোগ্য আমি না হই তোমার।।
 বিবাহ করিতে তোমা বড় ভয় মম।
 পাছে শুক্র-ক্রোধ হয় সংশয় জীবন।।
 সর্পের বিষের তেজে একজন মরে।
 ব্রাম্ভণের ক্রোধ-বিষে সবংশে সংহারে।।
 দেবযানী বলে রাজা কি তোমার ভয়।
 অযাচকে দান দিলে কিবা তার হয়।।
 রাজা বলে যদি তিনি দেন অনুমতি।
 তবেত বিবাহ করি শুন গুণবতী।।
 এত শুনি দেবযানী রাজার উত্তর।
 রাজারে লইয়া গেল পিতার গোচর।।
 পিতারে কহিল কন্যা যত বিবরণ।
 যযাতি নৃপতি এল মৃগয়া কারণ।।
 মহাদ্ধর্ম্মশীল রাজা নাহুষ তনয়।
 তাঁরে সম্প্রদান কর মোরে মহাশয়।।
 শুনিয়া কন্যার বাক্য বলে শুক্রাচার্য্য।
 যযাতিকে দিব তোমা এ নহে আশ্চর্য্য।।
 এত বলি দৈত্যগুরু চলে শীঘ্রগতি।
 দেবযানী সথা গেল যথা নরপতি।।
 শুক্রে দেখি নরপতি প্রণতি করিল।
 কৃতাঞ্জলি হইয়া সম্মুখে দাঁড়াইল।।
 শুক্র বলে শুনহ যযাতি নৃপমণি।
 এই দেবযানী হয় আমার নন্দিনী।।
 রাজা বলে ধর্ম্মাধর্ম্ম জানহ আপনি।
 ক্ষত্রিয়ের যোগ্য নহে ব্রাম্ভণ নন্দিনী।।
 শুক্র বলে আছে দোষ বলে বেদবাণী।
 ব্রাম্ভণতনয়া তিন বর্ণের জননী।।
 তথাপি বিবাহ কর আজ্ঞায় আমার।
 মম তপোবলে দোষ খণ্ডিবে তোমার।।
 এক বাক্য আমার শুনহ নৃপমণি।
 শর্মিষ্ঠা দেখহ এই দৈত্যের নন্দিনী।
 মম কন্যা দেবযানীর সেবিকা হয়।
 ইহারে ডাকিও নাহি শয়ন সময়।।
 এত বলি সমর্পি দেলেন দেবযানী।
 শুক্রে প্রণমিয়া দেশে গেল নৃপমণি।।
 শর্মিষ্ঠার সহ এক সহস্র যুবতী।
 অশোকবনেতে রাজা দিলেন বসতি।।