পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপাশ-বামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুর্গয়া।।

 তপ জপ ব্রত করে বেদ অধ্যয়ন।
 বৃদ্ধকালে নরপতি রূপেতে মদন।।
 তার রূপ গুণ দেখি প্রীতি যে পাইল।
 জল হৈতে গঙ্গাদেবী বাহির হইল।।
 জাহ্নবীর রূপে নিন্দে এ তিন ভূবন।
 দ্বিতীয় চন্দ্রের যেন হইল কিরণ।।
 দক্ষিণ উরুতে গিয়া বলিল রাজার।
 দেখিয়া বিস্মিত হৈল কৌরব-কুমার।।
 রাজা বলে কি করিব কি বাঞ্ছা তোমার।
 সত্য করি কহ যেই বাঞ্ছা আপনার।।
 কন্যা বলে কুরুশ্রেষ্ঠ তুমি মহামতি।
 তোমারে ভজিনু আমি হও মম পতি।।
 হৈয়া উপযাচিকা ভজয়ে যদি নারী।
 পুরুষ না ভজিলে সে হয় পাপকারী।।
 রাজা বলে পরদার আমি নাহি ভজি।
 পরদার পরশিলে নরকেতে মজি।।
 কন্যা বলে নহি আমি পরের গৃহিনী।
 দেবকন্যা আমি মোরে ভজ নৃপমণি।।
 রাজা বলে কন্যা না বলিও হেন বাণী।
 দক্ষিণ উরূতে বসে পুত্রবধূ গণি।।
 পুরুষের বাম ঊরু ভার্য্যার আসন।
 বুঝিয়া এমত বাক্য কহ কি কারণ।।
 সে কারণে তোমারে বধূর মধ্যে গণি।
 কেমনে করিব ভার্য্যা অনুচিত বাণী।।
 তোমার বচনে আমি হইনু স্বীকার।
 বরিব তোমার সুতে করি অঙ্গীকার।।
 আমার নিয়ম এই শুন মহারাজ।
 নিষেধ না করিবে আমার প্রিয় কাজ।।
 তবে সে তোমার সুতে করিব বরণ।
 এত বলি অন্তর্ধান হ'লেন তখন।।
 কন্যার বচনে রাজা হরষিত হৈল।
 সুপুত্র হইবে রাজা ভার্য্যারে কহিল।।
 ভার্য্যা সহ ব্রতাচার করিল নৃপতি।
 কতদিনা গর্ভে সুত হইল উৎপত্তি।
 দশমাস দশদিনে হইল কুমার।
 রাজীবলোচন মুখ চন্দ্রের আকার।।
 শান্তশীল সুত নাম শান্তনু থুইল।
 তাহার অনুজে নাম বহ্লীক রাখিল।।
 দিনে দিনে বাড়ে তার যুগল তনয়।
 কতদিনে দেখি পুত্র যৌবন সময়।।
 শান্তনুর নিকটেতে আসি নৃপবর।
 রাজনীতি ধর্ম্মশিক্ষা দিলেন বিস্তর।।
 এক কথা কহি আমি শুন মহামতি।
 আমার বচন এই না হও বিস্মৃতি।।
 তব জন্ম না হৈতে দৈবে একদিনে।
 পরমা সুন্দরীকন্যা আসে এই স্থানে।।
 বধু করি তাহারে করিলাম বরন।
 অঙ্গীকার করি কন্যা করিল গমন।।
 পরমা সুন্দরী কন্যা হয় দেবরূপী।
 তোমার সদনে যদি আইসে কদাপি।।
 তোমারে ভজিলে তুমি ভজিও তাহারে।
 নিষেধ না করিবে, সে যেই কর্ম্ম করে।।
 পিতা যাহা বলে তাহা স্বীকার করিল।
 শান্তনুর রাজ্য দিয়া রাজা বনে গেল।।
 মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
 কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান্।।
        ------
    অষ্টবসুর জন্ম বিবরণ
   হস্তিনানগরে রাজা শান্তনু হইল।
 ক্রমে তার গুণরাশি পৃথিবী পূরিল।।
 ধর্ম্মেতে ধার্ম্মিক রাজা মহাধনুর্দ্ধর।
 মৃগয়া করিতে ভ্রমে বনের ভিতর।।
 জাহ্নবীর দুই তটে ভ্রমে রাজা একা।
 পাইল দৈবাৎ তথা জাহ্নবীর দেখা।।
 পদ্মের কেশর-বর্ণ শুক্ল বস্ত্র-ধারী।
 রূপেতে নিন্দিত যত স্বর্গ বিদ্যাধরী।।
 আশ্চর্য্য কন্যার রূপ শান্তনু দেখিয়া।
 জিজ্ঞাসিল নরপতি নিকটেতে গিয়া।।
 কা তুমি দেবের কন্যা অপ্সরা কিন্নরী।
 কিবা নাগকন্যা তুমি কিবা বিদ্যাধরী।।
 অপরূপ রূপ ধর বর্ণিতে না পারি।
 তোমাতে মজিল মন হও মম নারী।।