পাতা:কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাহিনী
৪৩

অস্তে গেল দিনমণি। দেবর্ষি নারদ সন্ধ্যাকালে
শাখাসুপ্ত পাখীদের সচকিয়া জটারশ্মিজালে,
স্বর্গের নন্দনগন্ধে অসময়ে শান্ত মধুকরে
বিস্মিত ব্যাকুল করি, উত্তরিলা তপােভূমি পরে।
নমস্কার করি কবি, শুধাইলা সঁপিয়া আসন
“কি মহৎ দৈবকার্য্যে, দেব, তব মর্ত্ত্যে আগমন!”
নারদ কহিলা হাসি—“করুণার উৎসমুখে, মুনি,
যে ছন্দ উঠিল ঊর্দ্ধে, ব্রহ্মলােকে ব্রহ্মা তাহা শুনি
আমারে কহিলা ডাকি, যাও তুমি তমসার তীরে,
বাণীর বিদ্যুৎ-দীপ্ত ছন্দোবাণবিদ্ধ বাল্মীকিরে
বারেক শুধায়ে এস,―বোলো তারে, “ওগো ভাগ্যবান্,
এ মহা সঙ্গীতধন কাহারে করিবে তুমি দান।
এই ছন্দে গাঁথি লয়ে কোন্ দেবতার যশঃকথা
স্বর্গের অমর কবি মর্ত্ত্যলােকে দিবে অমরতা।”


কহিলেন শির নাড়ি ভাবােন্মত্ত মহামুনিবর,
“দেবতার সামগীতি গাহিতেছে বিশ্বচরাচর,
ভাষাশূন্য অর্থহারা। বহ্নি ঊর্দ্ধে মেলিয়া অঙ্গুলি
ইঙ্গিতে করিছে স্তব; সমুদ্র তরঙ্গবাহু তুলি
কি কহিছে স্বর্গ জানে; অরণ্য উঠায়ে লক্ষশাখা
মর্ম্মরিছে মহামন্ত্র; ঝটিকা উড়ায়ে রুদ্র পাখা
গাহিছে গর্জ্জন গান; নক্ষত্রের অক্ষৌহিণী হতে
অরণ্যের পতঙ্গ অবধি, মিলাইছে এক স্রোতে