পাতা:কিন্নর দল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্নর দল উঠে। জীবনের বহুদিন সেখানে সে কাটাইয়াছে। বহুদিন। কত দিন তাহা সে জানে না। বয়স তো তার কম হয় নাই - “প্ৰথম জীবনের কথা প্লায় কিছুই তাহার মনে নাই—যা একটু আধটু মনে পড়ে-সব আবছায়া, ধোঁয়া-কেবল খুব বড় বড় সবুজ মাঠ, তলায় ফল-বিছিয়ে থাকা বড় বড় গাছ, সুপেয় শীতল স্রোতের জল, সঁজালের ধোয়ার মৃদু গন্ধ-ভরা আবাসস্থান-এই সব মনে পড়ে। আজকাল কিন্তু বেশী করিয়া মনে পডে, ছোট খুকীর কথাখুকী তাহাকে সত্যই ভালবাসিত। এটা কোন জায়গা ? এক একবার বুধীর মনে হয় হয়তো বা এটা পাউণ্ড ঘর। কিন্তু বুধী জীবনে তো কতবার পাউণ্ড ঘরে কত বিনিদ্র রজনী যাপন করিয়াছে- এ ধরণের পাউণ্ড ঘর তো দেখে নাই ! সেখানে তো বাশের বেড়া ঘেরা খোলা জায়গায় তাহাকে থাকিতে হইয়াছে, মাথার ওপর সেখানে নীল আকাশ, সবুজ গাছপালাও চোখে পড়ে, পাখীর ডাকও শুনা যায়-এমন বিশ্ৰী আওয়াজ তো সে সব জায়গায় শুনে নাই। এমন কঠিন ইটের দেওয়াল দিয়া ঘেরা নয় সে জায়গা। পাখীর কথায় বুধীর মনে পড়িল অনেকদিন আগেকার এক ঘটনা। কতদিন আগে তাহা সে বলিতে পাব্লিবে না । মাঠের ধারে সে ঘাস খাইতেছিল ; একটা কি পাখী বনের ডাল হইতে উড়িয়া আসিয়া তাহার শিং এর উপর বসিল । শিং এর উপর পাখী বসা সে পছন্দ করে না-সুতরাং শিং নাড়া দিতেই পাখীটা উড়িয়া বসিল তাহারই সামনেকার উলুঘাসে ভরা বাচডার উপর। তখন উলুঘাসের শীষ গজাইয়াছে, শীষের মাথায় সাদা সাদা ফুল অজস্র অজস্র। পাখীটা সেই উলুফুলের মধ্যে বসিয়া পালক ফুলাইয়া পায়চারী করিতে লাগিল।