পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
কুরু পাণ্ডব
[৮

ইহাতে তোমারই দুর্ব্বলতা প্রকাশ পাইতেছে। তুমি দুর্য্যোধনের পাপ-পরায়ণতা অবগত হইয়াও চিরকাল তাহার মতের অনুসরণ করিয়া আসিয়াছ, এক্ষণে উহাকে বলপূর্ব্বক নিবারণ করিবার তোমার আর সাধ্য নাই।

 অনন্তর মাতৃ আজ্ঞা জ্ঞাত হইয়া দুর্য্যোধন পুনরায় সভায় প্রবিষ্ট হইলে গান্ধারী তাঁহাকে ভর্ৎসনাপূর্ব্বক কহিলেন―

 বৎস দুর্য্যোধন! কাম ও ক্রোধের বশীভূত হইয়া তোমার প্রজ্ঞা বিলুপ্ত হওয়াতেই তুমি গুরুজনের সদুপদেশ বাক্য লঙ্ঘন করিতেছ; কিন্তু, হে পুত্র! যদি নিজের অধর্ম্মবুদ্ধিকেই না জয় করিতে পারিলে তবে রাজ্যজয় বা রাজ্য রক্ষা করিবার আশা কিরূপে করিতেছ? বৎস! শান্তিমার্গ অবলম্বন করিয়া সকলকে রক্ষা কর, পাণ্ডবদের সহিত মিলিত হইয়া পরম সুখে সাম্রাজ্য ভোগ কর।

 মাতৃবাক্যের অবসানে দুর্য্যোধন প্রত্যুত্তর প্রদান না করিয়া পুনরায় সভাগৃহ ত্যাগ করিলেন এবং কর্ণ শকুনি ও দুঃশাসনের সহিত মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন।

 বাসুদেব তখন সকলের সমক্ষে ধৃতরাষ্ট্রকে কহিলেন―

 মহারাজ! আমি এক্ষণে সমস্ত অবস্থা অবগত হইলাম। স্পষ্টই বুঝিলাম যে আপনি স্বাধীন নহেন এবং দুর্য্যোধন রূঢ়ভাবে সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিতেছেন; অতএব এই সকল বৃত্তান্ত ধর্ম্মরাজের নিকট নিবেদন করিলেই আমার কার্য্য শেষ হয়। এক্ষণে আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ করিতেছি, আমি চলিলাম।