পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯]
কুরু পাণ্ডব
১৪৯

মানব সুখ-দুঃখের উপর কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য নির্ভর করে না। প্রত্যেক ক্ষেত্রে সামান্য মনুষ্য-বুদ্ধি অনুসারে ফলাফল বিচার করতে গেলে সংশয়-শূন্য ও স্থির সঙ্কল্প হইয়া কোন কার্য্যই করা যায় না। সেই নিমিত্ত ফলাফল ও স্বীয় সুখদুঃখ নগণ্য করিয়া স্বশ্রেণীর নির্দিষ্ট ধর্ম্মানুসারে কর্ত্তব্য পালন করিতে হয়। হে ক্ষত্রিয়শ্রেষ্ঠ! তুমি হৃদয় দৃঢ় করিয়া ক্ষত্রধর্ম্মানুসারে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হও, তাহাতে তােমাকে কিছুমাত্র পাপস্পর্শ করিবে না। হে পার্থ! যে চিরন্তন ঘটনাপরম্পরার ফলে এই সুমহৎ কুলক্ষয় আজি উপস্থিত হইয়াছে, ইহাতে তােমার বা কোন ব্যক্তিবিশেষের প্রভুতা বা দায়িত্ব নাই; অতএব হে স্বজন-বৎসল! তুমি এই সান্ত্বনা লাভ কর যে, তুমি কাহারও মৃত্যুর কারণ-স্বরূপ হইতে পার না। কার্য্য-কারণ-প্রবাহে, যাহা ঘটি বার তাহাই ঘটিতেছে। তন্মধ্যে তুমি স্বীয় কর্ত্তব্য অকাতরে পালন করিলে তােমার ধর্ম্মরক্ষা ও পরিণামে শাশ্বত মঙ্গল লাভ হইবে।

 কৃষ্ণের এই উপদেশ শ্রবণে অর্জ্জুনের করুণাজনিত মােহ অপসৃত হইল এবং তিনি স্বীয় কুলধর্ম্ম স্পষ্টরূপে উপলব্ধি করিয়া মনঃসংযমপূর্ব্বক কৃষ্ণকে কহিলেন―

 হে বাসুদেব! তোমার অনুগ্রহে আমার মােহান্ধকার নিরাকৃত হইল। তুমি আমাকে যুদ্ধানুষ্ঠান করিবার যে উপদেশ প্রদান করিলে আমি অবশ্যই তাহা সাধ্যানুসারে পালন করিব।