পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
কুরু পাণ্ডব
[১০

আঘাত করিতে উদাসীন দেখিয়া নিতান্ত উদ্বিগ্নচিত্তে রথ স্থগিত করিয়া কহিলেন—

 হে পার্থ! তুমি সভাস্থলে ভীষ্ম-বধের প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে, এক্ষণে ক্ষত্রিয় হইয়া কিরূপে নিজবাক্য মিথ্যা করিতেছ? তুমি ক্ষত্রধর্ম্ম স্মরণপূর্বক সন্তাপ পরিত্যাগ করিয়া যুদ্ধ কর।

 অর্জ্জুন বন্ধুর প্রতি তির্য্যক্‌ দৃষ্টিপাতমাত্র করিয়া অধোমুখে কহিলেন—

 হে কৃষ্ণ! যদি অবধ্য দিগকে বধ করিয়া নরক-যন্ত্রণাই ভোগ করিতে হইল, তবে সামান্য অরণ্য-বাস-ক্লেশে আমরা কাতর হইলাম কেন? যাহা হউক, তোমার উপদেশানুসারে যুদ্ধারম্ভ করিয়াছি, তোমার কথা অনুসারেই যুদ্ধ চালাইব, অতএব যথায় অভিলাষ অশ্বচালনা কর।

 তখন বাসুদেব ভীষ্ম-সমীপে অর্জ্জুনকে উপনীত করিলে ধনঞ্জয় অতিশয় অপ্রবৃত্তি-সহকারে তাঁহাকে আক্রমণ করিলেন, সুতরাং তাঁহার মৃদুযুদ্ধহেতু ভীষ্ম প্রভূত অবসর প্রাপ্ত হইয়া পাণ্ডব-বলক্ষয়-কার্য্য অবাধে চালাইতে লাগিলেন। যুধিষ্ঠিরের সৈন্যসংখ্যা ক্রমাগতই হ্রাস হইতেছে, তথাপি অর্জ্জুনের অনিচ্ছাপ্রেরিত লঘুবাণে তাহার কিছুমাত্র প্রতিকার হইতেছে না দেখিয়া কৃষ্ণ ক্রোধান্ধ ও স্বীয় প্রতিজ্ঞা বিস্মৃত হইয়া রথ হইতে লম্ফ প্রদান ও স্বীয় সুদর্শনচক্র বিঘূর্ণনপূর্ব্বক ভীষ্মকে আক্রমণার্থ পদব্রজেই ধাবিত হইলেন।