পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১]
কুরু পাণ্ডব
২৬৭

তাঁহাকে আক্রমণ করিলে দুর্য্যোধন লম্ফপ্রদানপূর্ব্বক পরিত্রাণ পাইলেন, কিন্তু তিনি ঊর্দ্ধে উত্থিত হইবামাত্র ভীম তাঁহার জানুদ্বয় লক্ষ্য করিয়া নিয়ম-বিরুদ্ধ অপঘাত করিলে দুর্য্যোধন ভগ্নোরু হইয়া ভূতলে নিপতিত হইলেন। তখন ক্রোধপরায়ণ বৃকোদর উন্মত্তের ন্যায় তাঁহার সমীপবর্ত্তী হইয়া তাঁহার মস্তকে বারম্বার পদাঘাত পূর্ব্বক কহিলেন—

 অহে দুরাত্মন! তুমি যে আমাদের প্রতি উপহাস ও দ্রৌপদীকে অপমান করিয়াছিল এই তাহার ফল ভোগ কর।

 ভীমসেনের এই নীচ-জনােচিত ব্যবহারে দর্শকগণের মধ্যে কেহ সন্তুষ্ট হইলেন না। ধর্ম্মরাজ সেই আত্মশ্লাঘানিরত বৃকোদরকে তিরস্কারপূর্ব্বক কহিলেন—

 হে ভীমসেন! তুমি বৈরঋণ হইতে বিমুক্ত হইয়াছ এবং সদুপায়েই হউক আর অসদুপায়েই হউক স্বীয় প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করিয়াছ। এ ক্ষণে ক্ষান্ত হও, আয় অধর্ম্ম সঞ্চয় করিও না! ইহার সৈন্য বন্ধু ভ্রাতা ও পুত্রগণ নিহত হওয়ায় এই বীর এক্ষণে সর্ব্ব প্রকারে শােচনীয়, তদুপরি এই কুরুকাজ আমাদের ভ্রাতা, অতএব তুমি কিরূপে নৃশংসের ন্যায় দুর্ব্ব্যবহারে প্রবৃত্ত হইতেছ?

 অনন্তর যুধিষ্ঠির দীনভাবে দুর্য্যোধনের নিকটে গমনপূর্ব্বক অশ্রুকণ্ঠে কহিলেন—

 ভ্রাতঃ। তুমি পূর্ব্বকৃত কর্ম্মের ঘোরতর ফল ভােগ করিয়াছ, এক্ষণে আর শােক করিও না। মৃত্যুই তোমাকে আশ্রয় প্রদান করিবে। আমরাই নিতান্ত হতভাগ্য, যে-