পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কুরু পাণ্ডব
২৩

 এই বনের অনতিদূরে নগর আছে বলিয়া অনুমান হইতেছে, এখানে এরূপ বিশ্বস্তচিত্তে নিদ্রামগ্ন থাকা অকর্ত্তব্য। কিন্তু ইহারা নিতান্ত পরিশ্রান্ত, অতএব ইহাদের নিদ্রার ব্যাঘাত না করিয়া আমি একাকী সতর্কভাবে জাগরণ করি।

 এইরূপ স্থির করিয়া ভীম উহাদের পানার্থ জল রক্ষা করিয়া স্বয়ং জাগ্রত রহিলেন।

 এই স্থানের নিকটবর্তী শালবৃক্ষে মেঘের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ ভীষণাকৃতি হিড়িম্বনামে এক নরমাংসাশী রাক্ষস বাস করিত। বহুদিবসাবধি ক্ষুধার্ত্ত থাকায় সে মনুষ্যগন্ধঘ্রাণে সাতিশয় লুব্ধ হইয়া স্বীয় ভগিনী হিড়িম্বাকে আহ্বান করিয়া বলিল—

 আজ বহুদিন পর সুকোমল মনুষ্য-মাংসে দশন নিমগ্ন করিয়া উষ্ণরুধির গান করিবার সুযোগ উপস্থিত। তুমি শীঘ্র ঐ বৃক্ষতলস্থিত মনুষ্যদিগকে বধ করিয়া আনয়ন কর, আমরা দুইজন উদর পূরণপূর্ব্বক পরমানন্দে নৃত্য করিব।

 হিড়িম্বা রাক্ষসী ভ্রাতৃবাক্য শ্রবণে সত্বর পাণ্ডবগণের নিকট আসিয়া ভীমসেনকে নিদ্রিত মাতা ও ভ্রাতৃবর্গের প্রহরীরূপে জাগ্রত দেখিল। বিশালবক্ষ মহাবল ভীমসেনের যৌবনকান্তি অবলোকনে রাক্ষসী তাঁহাকে পতিত্বে বরণ করিতে অভিলাষিণী হইল এবং দিব্যাভরণবেশ ধারণপূর্বক মৃদুমন্দগমনে ভীমের নিকট আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল—

 হে পুরুষশ্রেষ্ঠ! তুমি কে? এই দেবরূপী পুরুষগণ এবং এই সুকুমারী রমণীই বা কি সাহসে নিদ্রিত আছেন?