পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
কুরু পাণ্ডব
[৪

ভীত হইয়া স্ত্রীগণবেষ্টিত গান্ধারীর আশ্রয় লইবার উদ্দ্যেশ্যে দ্রুতবেগে গমন করিলেন।

 নির্লজ্জ দুঃশাসন ক্রোধভরে তর্জ্জন গর্জ্জন করিতে করিতে তাঁহার অনুধাবন করিয়া কেশ গ্রহণ করিল। দীর্ঘকেশী দ্রৌপদী বাতান্দোলিত কদলীপত্রের ন্যায় কম্পিত হইয়া বিনীতভাবে বলিলেন―

 হে দুঃশাসন! আমি একবস্ত্রা রহিয়াছি, এ অবস্থায় আমাকে সভায় লইয়া যাওয়া উচিত হয় না।

 কিন্তু দুঃশাসন তাঁহার বাক্য উপেক্ষা করিয়া বলিল—

 একবস্ত্রাই হও, আর বিবস্ত্রাই হও, তুমি পরাজিত হইয়া আমাদের দাসী হইয়াছ, অতএব আমাদের আজ্ঞা পালন করিতেই হইবে।

 এই বলিয়া দুর্ম্মতি কৃষ্ণার কেশ সবলে আকর্ষণপূর্ব্বক অনাথার ন্যায় তাঁহাকে সভা সমীপে আনয়ন করিল।

 যে কুন্তলদাম রাজসূয়যজ্ঞের অবভৃথস্নানসময়ে মন্ত্রপূত জলদ্বারা সিক্ত হইয়াছিল, তাহা পাষণ্ডের হস্তস্পর্শে কলুষিত দেখিয়া সভাস্থ সকলে অসহ্য শোকে অভিভূত হইলেন।

 দারুণ আকর্ষণে প্রকীর্ণকেশা ও স্খলিতার্দ্ধবসনা কৃষ্ণা এককালে লজ্জা ও ক্রোধে দগ্ধ হইয়া বলিতে লাগিলেন―

 রে দুরাত্মন্! এই সভামধ্যে আমার ইন্দ্রতুল্য গুরুজনগণ উপবিষ্ট আছেন, তাঁহাদের সমক্ষে তুই কোন্ সাহসে আমাকে এই অবস্থায় আনিলি? স্বয়ং ইন্দ্র তোর সহায় থাকিলেও রাজপুত্রগণ তোকে ক্ষমা করিবেন না।