পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প রল, তাহার জাবার লজ্জা কি ? যে অন্নহীন, তাহার আবার লজ্জা কি ? আমি এ o কালামুখ দেখাইতে পারি, কিন্তু তুমি বিষয়াধিকারিণী—বাড়ী তোমার-আমি তোমার বৈরিতা করিয়াছি—আমায় তুমি স্থান দিবে কি ? "পেটের দায়ে তোমার আশ্রয় চাহিতেছি—দিবে না কি ?” পত্র লিখিয়া সাত পাচ আবার ভাবিয়া গোবিন্দলাল পত্র ডাকে দিলেন। যথাকালে পত্র ভ্রমরের হস্তে পৌছিল। . পত্র পাইয়াই, ভ্রমর হস্তাক্ষর চিনিল। পত্র খুলিয়া কঁাপিতে কঁাপিতে, ভ্রমর শয়নগৃহে গিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল। তখন ভ্রমর, বিরলে বসিয়া, নয়নের সহস্র ধারা মুছিতে মুছিতে, সেই পত্র পড়িল । একবার, দুইবার, শতবার, সহস্রবার পড়িল । সে দিন ভ্রমর আর দ্বার খুলিল না। যাহার। আহারের জন্য তাহাকে ডাকিতে আসিল, তাহাদিগকে বলিল, “আমাৰ জর হইয়াছে—আহার করিব না।” ভ্রমরের সর্বদা জর হয় ; সকলে বিশ্বাস করিল। পরদিন নিদ্রাশূন্ত শয্যা হইতে যখন ভ্রমর গাত্ৰোখান করিলেন, তখন তাহার যথার্থই জর হইয়াছে। কিন্তু তখন চিত্ত স্থির—বিকারশূন্য। পত্রের উত্তর যাহা লিখিবেন, তাহ। পূৰ্ব্বেই স্থির হইয়াছিল। ভ্রমর তাহ সহস্ৰ সহস্রবুর ভাবিয়া স্থির করিয়াছিলেন, এখন আর ভাবিতে হইল না। পাঠ পর্য্যন্ত স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন। “সেবিকা” পাঠ লিখিলেন না। কিন্তু স্বামী সকল অবস্থাতেই প্ৰণম্য ; অতএব লিখিলেন, “প্রণামা শতসহস্র নিবেদনঞ্চ বিশেষ’ তারপর লিখিলেন, “আপনার পত্র পাইয়াছি। বিষয় আপনার । আমার হইলেও আমি উহা দান করিয়াছি। যাইবার সময় আপনি সে দানপত্র ছিড়িয়া ফেলিয়াছিলেন, স্মরণ থাকিতে পারে। কিন্তু রেজিষ্ট্রি অপিসে তাহার নকল আছে। আমি যে দান করিয়াছি, তাহা সিদ্ধ। তাহা এখনও বলবৎ । n “অতএব আপনি নিবির্বঘ্নে হরিদ্রাগ্রামে আসিয়া আপনার নিজসম্পত্তি দখল করিতে পারেন। বাড়ী আপনার । s আর এই পাচ বৎসরে আমি অনেক টাকা জমাইয়াছি। তাহাও আপনার । আসিয়া গ্রহণ করিবেন। -