পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२ কৃষ্ণকাস্তের উইল - . রো। না, ঠাকুরদাদা, না। তোমার দিবা, আফিঙ্গ চাই না। কাকা বললেন যে, ষেউইল আজ লেখা পড়া হয়েছে, তাতে তোমার দস্তখত হয় নাই। কৃষ্ণ। পেঁ কি ! আমার বেশ মনে পড়িতেছে যে, আমি দস্তখত করিয়াছি । রো। না, কাকা কহিলেন যে, তাহার যেন স্মরণ হচ্ছে, তুমি তাতে দস্তখত কর নাই; ভাল, সন্দেহ রাখায় দরকার কি ? তুমি কেন সেখান খুলে একবার দেখ না। কৃষ্ণ। বটে—তবে আলোটা ধর দেখি। so বলিয়া কৃষ্ণকান্ত উঠিয়া উপাধানের নিম্ন হইতে একটি চাবি লইলেন। রোহিণী নিকটস্থ দীপ হস্তে লইল। কৃষ্ণকান্ত প্রথমে একটি ক্ষুদ্র হাতবাক্স খুলিয়া একটি বিচিত্র চাৰি লইয়া, পরে একটা চেষ্ট ড্রয়ারের একটি দেরাজ খুলিলেন এবং অনুসন্ধান করিয়া ঐ छेझेल বাহির করিলেন। পরে বাক্স হইতে চসম বাহির করিয়া নাসিকার উপর সংস্থাপনের উদ্যোগ দেখিতে লাগিলেন। কিন্তু চসম লাগাইতে লাগাইতে দুই চারি বার আফিঙ্গের ঝিমকিনি আসিল—সুতরাং তাহাতে কিছুকাল বিলম্ব হইল। পরিশেষে চসম সুস্থির হইলে কৃষ্ণকান্ড উইলে নেত্রপাত করিয়া দেখিয়া হাস্য করিয়া কহিলেন, “রোহিণি, আমি কি বুড় হইয়। বিহ্বল হইয়াছি ? এই দেখ, আমার দস্তখত।” রোহিণী বলিল, “বালাই, বুড়ো হবে কেন ? আমাদের কেবল জোর করিয়া নাতিনী বল বই ত না। তা ভাল, আমি এখন যাই, কাকাকে বলি গিয়া ।” রোহিণী তখন কৃষ্ণকান্তের শয়নমন্দির হইতে নিষ্ক্রান্ত হইল ।

  1. 瘫 灣 游 গভীর নিশাতে কৃষ্ণকান্ত নিদ্র। যাইতেছিলেন, অকস্মাৎ তাহার নিদ্রাভঙ্গ হইল। নিদ্রাভঙ্গ হইলে দেখিলেন যে, তাহার শয়নগৃহে দীপ জ্বলিতেছে না। সচরাচর সমস্ত রাত্রি দীপ জ্বলিত, কিন্তু সে রাত্রে দীপ নিৰ্ব্বাণ হইয়াছে দেখিলেন, নিদ্রাভঙ্গকালে এমতও শব্দ র্তাহার কৰ্ণে প্রবেশ করিল যে, যেন কে একটা চাবি কলে ফিরাইল। এমত বোধ হইল, যেন ঘরে কে মানুষ বেড়াইতেছে। মানুষ র্তাহার পর্যাঙ্কের শিরোদেশ পৰ্য্যস্ত আসিল—তাহার বালিশে হাত দিল। কৃষ্ণকান্ত আফিঙ্গের নেশায় বিভোর ; না নিদ্রিত, না জাগরিত, বড় কিছু হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলেন না। ঘরে যে আলো নাই—তাহাও ঠিক বুঝেন নাই, কখন অৰ্দ্ধনিদ্রিত —কখন অৰ্দ্ধসচেতন-সচেতনেও চক্ষু খুলে না। একবার দৈবাৎ চক্ষু খুলিবায় কতকটা অন্ধকার বোধ হইল বটে, কিন্তু কৃষ্ণকান্ত তখন মনে করিতেছিলেন যে, তিনি হরি ঘোষের মোকদ্দমায় জাল দলিল দাখিল করায়, জেলখানায় গিয়াছেন। জেলখান।