প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ $# ডাকিতেছে। যেন এ জীবন বৃথায় গেল-মুখের মাত্রা যেন পুরিল না-যেন এ সংসারের অনন্ত সৌন্দৰ্য্য কিছুই ভোগ করা হইল না। ’ আবার কুহুম, কুহুঃ, কুহুঃ। রোহিণী চাহিয়া দেখিল—মুনীল, নিৰ্ম্মল, অনন্ত গগন-- নিঃশব্দ, অথচ সেই কুহুরবেরসঙ্গে মুর বাধা। দেখিল—নবপ্রস্ফুটিত আম্রমুকুল-কাঞ্চনগেীর, স্তরে স্তরে স্তরে স্যামল পত্রে বিমিশ্রিত, শীতল স্বগন্ধপরিপূর্ণ, কেবল মধুমক্ষিক বা ভ্রমরের গুনগুনে শদিত, অথচ সেই কুহুরবের সঙ্গে সুর বাধা। দেখিল—সরোবরতীরে গোবিন্দলালের পুষ্পোপ্তান, তাহাতে ফুল ফুটিয়াছে—বণকে বাকে, লাখে লাখে, স্তবকে স্তবকে, শাখায় শাখায়, পাতায় পাতায়, যেখানে সেখানে, ফুল ফুটিয়াছে ; কেহ শ্বেত, কেহ রক্ত, কেহ পীত, কেহ নীল, কেহ ক্ষুদ্র, কেহ বৃহৎ,—কোথাও মৌমাছি, কোথাও ভ্রমর—সেই কুহুরবের সঙ্গে সুর বাধা । বাতাসের সঙ্গে তার গন্ধ আসিতেছে—ঐ পঞ্চমের বাধা মুরে। আর সেই কুসুমিত কুঞ্জবনে, ছায়াতলে দাড়াইয়া—গোবিন্দলাল নিজে। র্তাহার অতি নিবিড়কৃষ্ণ কুঞ্চিত কেশদাম চক্র ধরিয়া তাহার চম্পকরাজিনিৰ্ম্মিত স্কন্ধোপরে পড়িয়াছে—কুমুমিতবৃক্ষাধিক সুন্দর সেই উন্নত দেহের উপর এক কুসুমিতা লতার শাখা আসিয়া ছলিতেছে—কি স্বর মিলিল ! এও সেই কুহুরবের সঙ্গে পঞ্চমে বাধা। কোকিল আবার এক অশোকের উপর হইতে ডাকিল “কু উ ।” তখন রোহিণী সরোবরসোপান অবতরণ করিতেছিল। রোহিণী । সোপান অবতীর্ণ হইয়া, কলসী জলে ভাসাইয়া দিয়া কাদিতে বসিল । কেন কাদিতে বসিল, তাহা আমি জানি না। আমি স্ত্রীলোকের মনের কথা কি প্রকারে বলিব ? তবে আমার বড়ই সন্দেহ হয়, ঐ দুষ্ট কোকিল রোহিণীকে র্কাদাইয়াছে। সপ্তম পরিচ্ছেদ বারুণী পুষ্করিণী লইয়া আমি বড় গোলে পড়িলাম—আমি তাহ বর্ণনা করিয়া উঠিতে পারিতেছি না। পুষ্করিণীটি অতি বৃহৎ—নীল কাচের আয়ন মত ঘাসের ফ্রেমে আটা পড়িয়া আছে। সেই ঘাসের ফ্রেমের পরে আর একখানা ফ্রেম—বাগানের ফ্ৰেম-পুষ্করিণীর চারি পাশে বাবুদের বাগান—উদ্যানবৃক্ষের এবং উদ্যানপ্রাচীরের বিরাম নাই। সেই ফ্রেমখানা বড় জীকাল-লাল, কাল, সবুজ, গোলাপী, সাদ, জরদ, নানাবর্ণ ফুলে মিনে করা—নানা ফলের পাতর বসান। মাঝে মাঝে সাদা বৈঠকখানা বাড়ীগুলা এক একখানা বড় বড় হীরার মত অস্তগামী সূর্য্যের কিরণে জ্বলিতেছিল। আর মাথার উপর আকাশ—সেও সেই বাগান ফ্রেমে WS) o
পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৫
অবয়ব