পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকাম্ভের উইল تاذ আঁটা, সেও একখানা নীল আয়না। আর সেই নীল আকাশ, আর সেই বাগানের ক্রেম, আর সেই ঘাসের ফ্রেম, ফুল, ফল, গাছ, বাড়ী, সব সেই নীল জলের দর্পণে প্রতিবিম্বিত হইতেছিল। মাঝে মাঝে সেই কোকিলটা ডাকিতেছিল। এ সকল এক রকম বুঝান যায়, কিন্তু সেই আকাশ, আর সেই পুকুর, আর সেই কোকিলের ডাকের সঙ্গে রোহিণীর মনের কি সম্বন্ধ, সেইটি বুঝাইতে পারিতেছি না। তাই বলিতেছিলাম যে, এই বারুণী পুকুর লইয়া আমি বড় গোলে পড়িলাম। - আমিও গোলে পড়িলাম, আর গোবিন্দলালও বড় গোলে পড়িল । গোবিন্দলালও সেই কুসুমিতা লতার অন্তরাল হইতে দেখিতেছিলেন যে, রোহিণী আসিয়া ঘাটের রাণায় একা বসিয়া কঁদিতেছে। গোবিন্দলাল বাবু মনে মনে সিদ্ধান্ত করিলেন, এ, পাড়ায় কোন মেয়ে ছেলের সঙ্গে কোনাল করিয়; আসিয়া কাদিতেছে । আমরা গোবিন্দলালের সিদ্ধান্তে তত ভরাভর করি না। রোহিণী কাদিতে লাগিল । রোহিণী কি ভাবিতেছিল, বলিতে পারি না। কিন্তু বোধ হয় ভাবিতেছিল যে, কি অপরাধে এ বালবৈধব্য আমার অদৃষ্টে ঘটিল ? আমি অন্তের অপেক্ষ এমন কি গুরুতর অপরাধ করিয়াছি যে, আমি এ পৃথিবীর কোন সুখভোগ করিতে পাইলাম না ? কোন দোষে আমাকে এ রূপ যৌবন থাকিতে কেবল শুষ্ক কাষ্ঠের মত ইহজীবন কাটাইতে হইল ? যাহারা এ জীবনের সকল মুখে মুখী—মনে কর, ঐ গোবিন্দলাল বাবুর স্ত্রী-তাহারা আমার অপেক্ষ কোন গুণে গুণবতী—কোন পুণ্যফলে তাহাদের কপালে এ স্থখ—আমার কপালে শূন্ত ? দূর হোক-পরের সুখ দেখিয়া আমি কাতর"নই—কিন্তু আমার সকল পথ বন্ধ কেন ? আমার এ অসুখের জীবন রাখিয়া কি করি ? ত, আমরা ত বলিয়াছি, রোহিণী লোক ভাল নয়। দেখ, একটুতে কত হিংসা ! রোহিণীর অনেক দোষ—তার কান্না দেখে কাদিতে ইচ্ছা করে কি ? করে না। কিন্তু অত বিচারে কাজ নাই—পরের কান্না দেখিলেই কাদা ভাল। দেবতার মেঘ কণ্টকক্ষেত্র দেখিয়া বৃষ্টি সম্বরণ করে না। - তা, তোমরা রোহিণীর জন্য একবার আহ বল। দেখ, এখনও রোহিণী, ঘাটে বসিয়া কপালে হাত দিয়া কাদিতেছে—শুন্য কলসী জলের উপর বাতাসে নাচিতেছে। শেষে সূৰ্য্য অস্ত গেলেন ; ক্রমে সরোবরের নীল জলে কালে ছায়া পড়িল--শেষে অন্ধকার হইয়া আসিল। পার্থী সকল উড়িয়া গিয়া গাছে বসিতে লাগিল। গোরু সকল গৃহাভিমুখে ফিরিল। তখন চন্দ্র উঠিল—অন্ধকারের উপর মূছ আলো ফুটিল। তখনও