পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہ/lo ১৮৭৪ খ্ৰীষ্টাব্দের অক্টোবর (সেপ্টেম্বর ?) মাসে বঙ্কিমচন্দ্র বারাসত হইতে অস্থায়ী ভাবে মালদহে রোড-সেসের কাজে যান। অসুস্থতাবশতঃ সেখান হইতে ছুটি লইয়া (১৮৭৫,২৪ জুন) তিনি কাটালপাড়ায় আসিয়া বাস করেন। এই অবসরকালেই 'কৃষ্ণকাস্তের উইল রচনা আরম্ভ হয়। এই সময়েই উহা সম্পূর্ণ হইয়াছিল কি না, তাহ জানিবার উপায় নাই। কারণ, 'বঙ্গদর্শনে ‘কৃষ্ণকাম্ভের উইল’ ১২৮২ বঙ্গাব্দের পৌষ মাস হইতে প্রকাশিত হইতে থাকে। ফাস্কনে নবম পরিচ্ছেদ পর্যন্ত বাহির হইয়া উহা বন্ধ হইয়াছে দেখিতে পাই । চৈত্র মাসে কৃষ্ণকান্তের উইলের কোনও পরিচ্ছেদ বাহির হয় নাই এবং চৈত্র মাসেই বঙ্কিমচন্দ্র-সম্পাদিত বঙ্গদর্শন “বিদায় গ্রহণ” করিয়াছে। ১২৮৪ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস হইতে বঙ্গদর্শন পুনরায় সঞ্জীবচন্দ্রের সম্পাদনায় বাহির হয় ; ‘কৃষ্ণকাস্তের উইল’ও দশম পরিচ্ছেদ হইতে ধারাবাহিক ভাবে বাহির হইতে থাকে। ঐ বৎসরের মাঘ মাসে ৪৬ পরিচ্ছেদ ও পরিশিষ্ট, মোট ৪৭ পরিচ্ছেদে উপন্যাস সম্পূর্ণ হয়। ১৮৭৮ খ্ৰীষ্টাব্দে (১২৮৫, ভাদ্র) কৃষ্ণকাস্তের উইল’ প্রথম পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ১৭০ ৷ দ্বিতীয় সংস্করণ ( পৃষ্ঠা-সংখ্যা ১৭১) ১৮৮২ খ্ৰীষ্টাব্দে এবং চতুর্থ বা বঙ্কিমচন্দ্রের জীবিতকালে শেষ সংস্করণ ( পৃষ্ঠা-সংখ্যা ১৯৬) ১৮৯২ সালে বাহির হয়। আমরা আখ্যাপত্ৰহীন তৃতীয় সংস্করণ দেখিয়াছি; ইহার পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ১৭২ ৷ কৃষ্ণকাস্তের উইলের কোনও সংস্করণেই কোনও “ভূমিকা” বা “বিজ্ঞাপন" ছিল না। বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত 'কৃষ্ণকাস্তের উইলের রোহিণী ও গোবিন্দলাল-চরিত্র পরবর্তী কালে পুস্তক প্রকাশের সময় পরিবর্তিত হইয়াছে। এই পরিবর্তনের ক্রমোন্নতি আছে। বঙ্গদর্শনের রোহিণী শচরিত্র, লোভী। প্রথম সংস্করণের রোহিণী প্রায় তাই, ক্ষরিত্রত ওলোভ একটু কম দেখানো হইয়াছে। দ্বিতীয় সংস্করণে রোহিণী আশ্চৰ্য্যরকম বদলাইয়া গিয়াছে ; চরিত্রে সংযম ও দৃঢ়তা নাই বটে, কিন্তু শচরিত্র নয়, লোভী মোটেই নয়। শেষ পর্য্যন্ত রোহিণী তাহাই আছে। গোবিন্দলালের চরিত্র বঙ্গদর্শন এবং প্রথম তিন সংস্করণের পুস্তকে প্রায় অনুরূপই আছে। চতুর্থ সংস্করণে শেষাংশের পরিবর্তনে চরিত্রও পূৰ্ব্বাপর বদলাইয়। গিয়াছে। পূৰ্ব্বেকার গোবিন্দলাল আত্মহত্যা করিয়া মনের জ্বালা জুড়াইতে চাহিয়াছিল— শেষের গোবিন্দলাল প্রায়শ্চিত্ত ও ভগবৎ-সাধন দ্বারা শাস্তি লাভ করিয়াছিল। কৃষ্ণকাস্তের উইলে’র পরিবর্তন সম্বন্ধে অনেকে আলোচনা করিয়াছেন, তন্মধ্যে ছুই জনের আলোচনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৩২০ সালের ‘ভারতবর্ষের অগ্রহায়ণ-সংখ্যায় শরচ্চন্দ্র ঘোষাল শাস্ত্রী মহাশয় বঙ্গদর্শন ও বর্তমান সংস্করণপুস্তকের পার্থক্য প্রদর্শন করেন।