পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড—দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ o, (to তাহার সর্বাঙ্গ জ্বলিয়া গেল। সহিতে না পারিয়া ভ্রমর বলিল, “তুমি সে দিন রাত্রে ঠাকুরের ঘরে চুরি করিতে আসিয়াছিলে ? আজ রাত্রে কি আমার ঘরে সেই অভিপ্রায়ে আসিয়াছ না কি ?” রোহিণী মনে মনে বলিল যে, তোমার মুণ্ডপাত করিতে আসিয়াছি। প্রকাশ্বে বলিল, “এখন আর আমার চুরির প্রয়োজন নাই ; আমি আর টাকার কাঙ্গাল নহি । মেজ বাবুর অনুগ্রহে, আমার আর খাইবার পরিবার দুঃখ নাই। তবে লোকে যতটা বলে, ততটা নহে ।” ভ্রমর বলিল, “তুমি এখান হইতে দূর হও।” রোহিণী সে কথা কাণে না তুলিয়া বলিতে লাগিল, “লোকে যতটা বলে, ততট। নহে । লোকে বলে, আমি সাত হাজার টাকার গহনা পাইয়াছি । মোটে তিন হাজার টাকার গহনা, আর এই শাড়ীখানি পাইয়াছি। তাই তোমায় দেখাইতে আসিয়াছি। সাত হাজার টাকা লোকে বলে কেন ?” এই বলিয়া রোহিণী পুটুলি খুলিয়া বানারসী শাড়ী ও গিলটির গহনাগুলি ভ্রমরকে দেখাইল। ভ্রমর নাথি মারিয়া অলঙ্কারগুলি চারি দিকে ছড়াইয়া দিল । রোহিণী বলিল, “সোনায় পা দিতে নাই।” এই বলিয়া রোহিণী নিঃশব্দে গিলটির অলঙ্কারগুলি একে একে কুড়াইয়া, আবার পুটুলি বাধিল । পুটুলি বাধিয়া, নিঃশব্দে সেখান হইতে বাহির হইয়া গেল । & আমাদের বড় দুঃখ রহিল। ভ্রমর ক্ষীরোদাকে পিটিয়া দিয়াছিল, কিন্তু রোহিণীকে একটি কিলও মারিল না, এই আমাদের আন্তরিক দুঃখ । আমাদের পাঠিকার উপস্থিত থাকিলে রোহিণীকে যে স্বহস্তে প্রহার করিতেন, তদৃবিষয়ে আমাদিগের কোন সংশয় নাই । স্ত্রীলোকের গায়ে হাত তুলিতে নাই, এ কথা মানি। কিন্তু রাক্ষসী বা পিশাচীর গায়ে যে হাত তুলিতে নাই, এ কথা তত মানি না। তবে ভ্রমর যে রোহিণীকে কেন মারিল না, তাহা বুঝাইতে পারি। ভ্রমর ক্ষীরোদাকে ভাল বাসিত,সেই জন্য তাহাকে মারপিট করিয়াছিল। রোহিণীকে ভাল বাসিত না, এজন্য হাত উঠিল না । ছেলেয় ছেলেয় ঝকড়া করিলে জননী আপনার ছেলেটিকে মারে, পরের ছেলেটিকে মারে না ।