পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qbr কৃষ্ণকাস্তের উইল জিজ্ঞাসা করিয়াছ-“ভাল আছ ত ?” হয়ত সে কথাও হয় নাই—কথাই হয় নাই— আন্তরিক বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে। হয়ত রাগে, অভিমানে আর দেখাই হয় নাই । তত নাই হউক, একবার চক্ষের বাহির হইলেই, যা ছিল তা আর হয় না। যা যায়, তা আর আসে না। যা ভাঙ্গে, আর তা গড়ে না। মুক্তবেণীর পর যুক্তবেণী কোথায় দেখিয়াছ ? ভ্রমর গোবিন্দলালকে বিদেশ যাইতে দিয়া ভাল করেন নাই। এ সময় দুই জনে একত্রে থাকিলে, এ মনের মালিন্ত বুঝি ঘাটত না। বাচনিক বিবাদে আসল কথা প্রকাশ পাইত। ভ্রমরের এত ভ্রম ঘটিত না। এত রাগ হইত না। রাগে এই সৰ্ব্বনাশ হইত না । গোবিন্দলাল স্বদেশে যাত্রা করিলে, নায়েব কৃষ্ণকাস্তের নিকট এক এত্তেলা পাঠাইল যে, মধ্যম বাবু অদ্য প্রাতে গৃহাভিমুখে যাত্রা করিয়াছেন। সে পত্র ডাকে আসিল । নৌকার অপেক্ষ ডাক আগে আসে। গোবিন্দলাল স্বদেশে পৌছবার চারি পাঁচ দিন আগে, কৃষ্ণকাস্তের নিকট নায়েবের পত্র পৌছিল। ভ্রমর শুনিলেন, স্বামী আসিতেছেন। ভ্রমর তখনই আবার পত্র লিখিতে বসিলেন। খান চারি পাচ কাগজ কালিতে পুরাইয়া, ছিড়িয়া ফেলিয়া, ঘণ্টা দুই চারি মধ্যে একখানা পত্র লিখিয়া খাড়া করিলেন । এ পত্রে মাতাকে লিখিলেন যে, “আমার বড় পীড়া হইয়াছে। তোমরা যদি একবার আমাকে লইয়া যাও, তবে আরাম হইয়া আসিতে পারি। বিলম্ব করিও না পীড়া বৃদ্ধি হইলে আর আরাম হইবে না। পার যদি, কালই লোক পাঠাইও। এখানে পীড়ার কথা বলিও না।” এই পত্র লিখিয়া, গোপনে ক্ষৗরি চাকরাণীর দ্বারা লোক ঠিক করিয়া, ভ্রমর তাহ পিত্রালয়ে পাঠাইয়। দিল । যদি মা না হইয়া, আর কেহ হইত, তবে ভ্রমরের পত্র পড়িয়াই বুঝিতে পারিত যে ইহার ভিতর কিছু জুয়াচুরি আছে। কিন্তু মা, সন্তানের পীড়ার কথা শুনিয়া একেবারে কাতর হইয়া পড়িলেন। উদ্দেশে ভ্রমরের শাশুড়ীকে এক লক্ষ গালি দিয়া স্বামীকে কিছু গালি দিলেন, এবং কাদিয়া কাটিয়া স্থির করিলেন যে, আগামী কলা বেহার। পান্ধী লইয়া চাকর চাকরাণী ভ্রমরকে আনিতে যাইবে । ভ্রমরের পিতা, কৃষ্ণকান্তকে পত্র লিখিলেন । কৌশল করিয়া, ভ্রমরের পীড়ার কোন কথা ন৷ লিখিয়া, লিখিলেন যে, “প্রমরের মাত৷ অত্যন্ত পীড়িত হইয়াছেন—ভ্রমরকে একবার দেখিতে পাঠাইয়া দিবেন।” দাস দাসীদিগকে সেই মত শিক্ষা দিলেন। কৃষ্ণকান্ত বড় বিপদে পড়িলেন। এ দিকে গোবিন্দলাল আসিতেছে, এ সময়ে ভ্রমরকে পিত্রালয়ে পাঠান অকৰ্ত্তধ্য। ও দিকে ভ্রমরের মাত পীড়িত, না পাঠাইলেও নয়। সাত পাঁচ ভাবিয়া, চারি দিনের কড়ারে ভ্রমরকে পাঠাইয়া দিলেন।