পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যখন নিশাকর আসিয়া বড় হলে বসিল, রোহিণীকে সুতরাং পাশের কামরায় প্রবেশ করিতে হইয়াছিল। কিন্তু নয়নের অন্তরাল হইল মাত্র-শ্রবণের নহে। কথোপকথন যাহা হইল—সকলই কাণ পাতিয়া শুনিল। বরং দ্বারের পরদাটি একটু সরাইয়া, নিশাকরকে দেখিতে লাগিল। নিশাকরও দেখিল যে, পরদার পাশ হইতে একটি পটলচেরা চোক তাকে দেখিতেছে। রোহিণী শুনিল যে, নিশাকর অথবা রাসবিহারী হরিদ্রাগ্রাম হইতে আসিয়াছে। রূপে চাকরও রোহিণীর মত সকল কথা দাড়াইয়া শুনিতেছিল। নিশাকর উঠিয়া গেলেই রোহিণী পরদার পাশ হইতে মুখ বাহির করিয়া আঙ্গুলের ইশারায় রূপোকে ডাকিল। রূপে কাছে আসিলে, তাহাকে কাণে কাণে বলিল, “যা বলি তা পারবি? বাবুকে সকল কথা লুকাইতে হইবে। যাহা করিবি তাহা যদি বাবু কিছু না জানিতে পারেন, তবে তোকে পাচ টাকা বখশিশ দিব।” - রূপে মনে ভাবিল—আজ না জানি উঠিয়া কার মুখ দেখিয়াছিলাম—আজ ত দেখচি টাকা রোঞ্জকারের দিন। গরিব মানুষের দুই পয়সা এলেই ভাল। প্রকাশ্বে বলিল, “যা বলিবেন, তাই পারিব। কি, আজ্ঞা করুন।” রো। ঐ বাবুর সঙ্গে সঙ্গে নামিয়া যা । উনি আমার বাপের বাড়ীর দেশ থেকে এসেছেন। সেখানকার কোন সংবাদ আমি কখনও পাই না—তার জন্য কত কঁাদি । যদি দেশ থেকে একটি লোক এসেছে, তাকে একবার আপনার জনের দুটো খবর জিজ্ঞাসা করবো। বাবু ত রেগে ওকে উঠিয়ে দিলেন। তুই গিয়ে তাকে বসা। এমন জায়গায় বসা, যেন বাবু নীচে গেলে না দেখতে পান। আর কেহ না দেখিতে পায়। আমি একটু নিরিবিলি পেলেই যাব। যদি বসতে না চায়, তবে কাকুতি মিনতি করিস্! রূপে বখশিশের গন্ধ পাইয়াছে—যে আজ্ঞা বলিয়া ছুটিল। নিশাকর কি অভিপ্রায়ে গোবিন্দলালকে ছলিতে আসিয়াছিলেন, তাহ বলিতে পারি না, কিন্তু তিনি নীচেয় আসিয়া যেরূপ আচরণ করিতেছিলেন, তাহা বুদ্ধিমানে দেখিলে তাহাকে বড় অবিশ্বাস করিত। তিনি গৃহপ্রবেশদ্বারের কবাট, খিল, কজা প্রভৃতি পৰ্য্যবেক্ষণ করিয়া দেখিতেছিলেন । এমত সময়ে রূপে খানসামা আসিয়া উপস্থিত হইল। রূপে বলিল, “তামাকু ইচ্ছা করিবেন কি ?” নিশা । বাবু ত দিলেন না, চাকরের কাছে খাৰ কি ?