পাতা:কৃষ্ণচরিত্র.djvu/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|s কৃষ্ণচরিত্র কৃষ্ণ যেমন আধুনিক বৈষ্ণব কবিদিগের নায়ক, সেইরূপ জয়দেবে, ও সেইরূপ শ্ৰীমদ্ভাগবতে । কিন্তু কৃষ্ণচরিত্রের আদি, শ্ৰীমদ্ভাগবতেও নহে। ইহার আদি মহাভারতে। জিজ্ঞাস্ত এই যে মহাভারতে যে কৃষ্ণচরিত্র দেখিতে পাই, শ্ৰীমদ্ভাগবতেও কি সেই কৃষ্ণের চরিত্র ? জয়দেবেও কি তাই ? এবং বিদ্যাপতিতেও কি তাই ? চারিজন গ্রন্থকারই কৃষ্ণকে ঐশিক অবতার বলিয়া স্বীকার করেন, কিন্তু চারিজনেই কি এক প্রকার সে ঐশিক চরিত্র চিত্রিত করিয়াছেন ? যদি না করিয়া থাকেন, তবে প্রভেদ কি ? যাহা প্রভেদ বলিয়া দেখা যায়, তাহার কি কিছু কারণ নির্দেশ করা যাইতে পারে ? সে প্রভেদের সঙ্গে, সামাজিক অবস্থার কি কিছু সম্বন্ধ আছে ?. . কাব্য বৈচিত্র্যের তিনটি কারণ—ম ষ্ট্রয় , সাময়িকতা, এবং স্বাতন্ত্র্য। যদি চারি জন । কবি কর্তৃক গীত কৃষ্ণচরিত্রে প্রভেদ পাওয়া যায়, তবে সে প্রভেদের কারণ তিন প্রকারই থাকিবার সম্ভাবন । বঙ্গবাসী জয়দেবের সঙ্গে, মহাভারতকার বা শ্ৰীমদ্ভাগবতকারের জাতীয়তা জনিত । পার্থক্য থাকিবারই সম্ভাবনা ; তুলসীদাসে এবং কৃত্তিবাসে আছে । আমরা জাতীয়তা এবং স্বাতন্ত্র্য পরিত্যাগ করিয়া, সাময়িকতার সঙ্গে এই চারিটি কৃষ্ণচরিত্রের কোন সম্বন্ধ আছে কি না ইহারই অতুসন্ধান করিব –পূ. ৫৪৮-৫৪৯ । এই অনুসন্ধানের ফলই বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণচরিত্র । এই ফল সম্পূর্ণ ফলিতে অনেক দেরি হইয়াছিল । বঙ্কিমচন্দ্র এই প্রসঙ্গ কিছু কালের জন্য পরিত্যাগ করেন। ১৮৭৬ খ্ৰীষ্টাব্দে প্রকাশিত র্তাহার ‘বিবিধ সমালোচন’ গ্রন্থে উক্ত কৃষ্ণচরিত্র নিবন্ধটি মুদ্রিত হয় ( পৃ. ১০১১১- ) ; ‘বিবিধ প্রবন্ধ প্রকাশের সময় প্রবন্ধটি পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু এই প্রসঙ্গ বঙ্কিমচন্দ্র পরিত্যাগ করেন নাই । তিনি ভিতরে ভিতরে আপনাকে প্রস্তুত করিতেছিলেন । ১২৯১ বঙ্গাব্দে "প্রচার’ ও ‘নবজীবন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হিন্দুধর্মের বিস্তৃত আলোচনায় বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন ও প্রচারে’র আশ্বিন সংখ্যা হইতে পুনরায় ‘কৃষ্ণচরিত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইতে থাকে। ১২৯১ সালের আশ্বিন, কাৰ্ত্তিক, মাঘ, ফাঙ্কন, চৈত্র ; ১২৯২ সালের বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কাৰ্ত্তিক, অগ্রহায়ণ-পৌষ, মাঘ, ফাঙ্কন-চৈত্র ; এবং ১২৯৩ সালের বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠআষাঢ়ে ইহা প্রকাশিত হয় । ঐ বৎসরেই ( ১৮৮৬ খ্ৰীষ্টাব্দে ) বঙ্কিমচন্দ্র এই পর্যাপ্ত লিখিত অংশকে কৃষ্ণচরিত্র। প্রথম ভাগ আখ্যা দিয়া পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। ইহার পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ১৯৮। ১২৯৩ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ-পৌষ সংখ্যা প্রচারে বঙ্কিমচন্দ্র কৃষ্ণচরিত্রের দ্বিতীয় ভাগ বা দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ আরম্ভ করেন। এই সংখ্যায় “ভগবদ্যান পৰ্ব্বাধ্যায়ে”র হই পরিচ্ছেদ (“প্রস্তাব” ও “যাত্ৰা” ) মাত্র প্রকাশিত হয়। যে কারণেই হউক, ইহার পর