তথাপি ওরই মধ্যে যে একখানি রূপের পসরা সাজানো রয়েছে সেও দেখতে পেতে বাধে না। ইলারই অনুরূপ পাতলা দুখানি ঠোট, কালো ও বিশাল দুটি চোখ, রুক্ষ চুলগুলিতেও সেই একই মৃদু কুঞ্চন, নীল শিরা-বারকরা কপালখানিও ছোট্ট। আমার হঠাৎ কান্ত কবির একটি বড় করুণ লাইন মনে পড়ে গেল:—
“ফুটিতে পারিত গো ফুটিল না সে,
অকালে ঝরে গেল, মরমে মরে গেল,
প্রাণ-ভরা আশা সমাধি পাশে।”
কিন্তু কেনই বা তা যাবে? সাগ্রহে বলে ফেললেম, “ইলা দেবী, আপনার মেয়ের চিকিৎসার ভার আমার হাতে দিন, আমি ওকে স্বাভাবিক করে দোব।”
বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত তড়াক্ করে চেয়ার থেকে ছিট্কে লাফিয়ে উঠে দিব্যেন্দু আমায় জড়িয়ে ধরে গভীর আনন্দে বলে উঠলো,“গ্যারাণ্টি?”
“গ্যারাণ্টি”—
ইলা দেবী সহসা নতজানু হয়ে আমার পায়ের তলায় বসে অঞ্জলিবদ্ধ করে প্রণাম করলেন, তাঁর দুচোখে জলের ধারা অঝোরে ঝর ঝর করে ঝরে পড়তে লাগলো।
আমি তাঁর হাত ধরে উঠালেম, সস্নেহে বললেম, “দক্ষিণা পরে নোব বোন।”
মিসেস পাকড়াসী হঠাৎ এই ভাব-তরঙ্গের সমস্ত মাধুর্য্য ধ্বংস করে দিয়ে বলে উঠলেন, “বেবির বেদানার রস খাবার সময় হয়েছে, ওকে আমি নিয়ে যাচ্চি।”
আমি সুস্পষ্ট চমকে চম্কে উঠলেম, এই কণ্ঠই যে সেই নিশীথরাত্রের নিশাচারিণীর কণ্ঠে শুনেছিলেম, তাতে আমার অণুমাত্র সন্দেহ রইলো না। কিন্তু কেন?—আর সেই অনুজ্ঞাকারী পুরুষটিই বা কে?