পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

 সুনীতি অকারণেই অপ্রতিভ হইয়া পড়িল, ঈষৎ কুণ্ঠার সহিত জিজ্ঞাসা করিল, “কেন? রান্না কি ভাল হয়নি? পাঁড়েটাকে এত করে শেখাচ্ছি তবু—”

 চন্দ্রকুমার জিহ্বা-তালু সংযোগে একটা বিশেষরূপ ধ্বনি করিয়া ওর কথায় বাধা দিলেন, বলিলেন, “কোথায় তোমার পাঁড়ে? তাকে তো আমি গলা ধাক্কা দিতে দিতে বাড়ী থেকে বার করে দিয়েছি। রাঁধবে কে শুনি?”

 সুনীতি একটুক্ষণ স্তব্ধ থাকিল, পরে সচেষ্ট আত্মসম্বরণের সহিত কহিল, “নতুন ঝিকে দিয়ে কিছু করিয়ে, না হয় বাজার থেকে আনিয়ে খেলে না কেন? তুমি তো জানতে আমার ফিরতে একটু রাত হবে!”

 চন্দ্রকুমার এই কথায় যেন আত্মমর্যাদায় নিদারুণ আঘাত পাইলেন, অকস্মাৎ সোজা হইয়া দাঁড়াইয়া সদর্পে ও সদম্ভে কহিয়া উঠিলেন, “তুমি কি মনে ভেবেছ পাঁড়েকে বিদায় দিয়ে আমি তোমার ঝি-মাগীকে বাড়ীতে থাকতে দিয়েছি? কেন? কেন দোব? মেয়েমানুষ বলে? কিসের জন্যে? মেয়েমানুষ কি পুরুষ মানুষের চাইতে কোন কিছুতে কম? ওরা কি পুরুষের চেয়ে কম খায়, না কম পরে? খাটতে পারে কম? চুরি করে না? মিথ্যের ঝুড়ি নয়? যত সব মন্দ কাজ সংসারে হয়, সব্বার মধ্যেই থাকে ওরা, ওরা—ওরা·····”

 “বাবা!”

 চন্দ্রকুমার সর্ব্বশরীরে একটা ঝটকা দিয়া আধফেরা হইয়া দাঁড়াইলেন, মুখে একটা তীব্র বিদ্রূপের কুটিল হাস্য তাঁর ফুটিয়া উঠিল, “হ্যাঁগো হ্যাঁ! তোমার গায়ে তো লাগতেই পারে, মেয়েমানুষ কি-না! কিন্তু সত্যি কথা বলবো, হ্যাঁ নিশ্চয়ই বলবো, তোমার ভাল না লাগলেও বলবো,—শুনতে পেলে?”