পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১১
হেমলক

 এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ সেকেণ্ড, মিনিট, কোয়ার্টার কেটে গেল, নাড়ী ফিরে আসছে, শীতলতা আস্তে আস্তে বিদূরিত হয়ে আসছে,—আরো, আরো মিনিটের পর মিনিট কেটে চললো, ক্রমে ঘণ্টাও পূর্ণ হলো, দিব্যেন্দু গভীর শান্তির পূর্ণ শ্বাস গ্রহণ করে নিদ্রালুকণ্ঠে জড়িত স্বরে বলে উঠলো,—“বেঁচে গেছি! না রে?”

 অপরিসীম আনন্দে ওকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে গভীর স্বরে বলে উঠলেম, “হ্যাঁ, ঈশ্বরকে মহা ধন্যবাদ।”

 “তোমাকেও সেই সঙ্গে—আঃ! ঘুমুই?”

 “ঘুমাও—” বলে ওর মাথার তলায় বালিশ দিয়ে পা দুটো তুলে একটা চেয়ারে ঠিক করে রেখে ভাল করে শুইয়ে দিলেম। একমুহূর্ত্ত পরেই ঘুমন্ত মানুষের মত সহজ শ্বাস-প্রশ্বাস বইতে লাগলো, পুনরুজ্জীবিত দিব্যেন্দু সুস্থ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

 ভগবানের সঙ্গে সেই মিশর-পিরামিডের ধারেই হঠাৎ পাওয়া আসন্নমৃত্যু ফকিরের উদ্দেশ্যেও গভীর কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেম! তাঁর কথা কয়টি মনের মধ্যে ধ্বনিত হয়ে উঠলো:

 “হিন্দু হও, মুসলমান বা খৃষ্টান হও, তুমি আল্লার প্রেরিত হয়ে এ-সময়ে যখন এসেছ আমার কাছে, নিশ্চয় সেই বিশ্বাসঘাতক সয়তানের দোসর হবে না। সে আমার শিষ্য সেজে এসেছিল, চুরি করে নিয়ে গেছে প্রাচীনকালের আবিষ্কৃত অতি ভয়ঙ্কর সর্প-বিষ হেমলক—যার এক তিল প্রমাণ খেলে সঙ্গে সঙ্গে বুকে আগুন জ্বলে উঠবে, আর পনের মিনিটের মধ্যে সেই আগুন হয়ে যাবে বরফ, তার এই প্রতিযেধক আমি সারা জীবন ধরে প্রাণপণ চেষ্টায় আবিষ্কার করেছি। এটা সে খুঁজে পায়নি, তাই নিতে পারেনি। আমার মাটিতে পোঁতা আসরফী আর ঐ বিষের কৌটা নিয়েই সে পালিয়ে গেছে। তুমি নাও এই অমৃত।—যখনই ঐ লক্ষণ দুটি দেখবে, বিনা