পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
১১৮

সোদরার অকৃত্রিম স্নেহ। অনায়াসেই মায়ের মাথায় হাত দিয়ে ও তাঁর বলা বুলি কপ্‌চিয়ে গেল। যতদিন বাঁচবে সূর্য্যকান্ত যাই করুক, তার কোন ক্ষতি সে হতে দেবে না। তার বিয়ে দিয়ে ভাল বউ আনবে, তাদের অর্থকষ্ট না হয় সে বিষয়েও দায় ঘাড়ে নেবে। সানন্দেই সেই নির্ব্বোধ বালিকা আসন্ন-মৃত্যু জননীকে এই সমস্ত স্বীকৃতি দান করে অন্তর হতে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে মহামন্ত্রের মতই এই মাতৃদীক্ষা গ্রহণ করলে। বিষবৃক্ষে ফুল ধরলো।—

 সঙ্গে সঙ্গে সূর্য্যকান্ত মায়ের সমস্ত সোনা, জহরৎ, রূপার তৈজসপত্র, হাজরা সাহেবের সোনার রিষ্ট-ব্যাণ্ড, বোম, পিস্তল, রাইফেল, বাড়ীর যাবতীয় মূল্যবান দ্রব্য এবং জাল সই-এ বাঙ্কের টাকাগুলি পর্য্যন্ত সমস্তই চুরি করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল।

 এরপর একদিকে অনেকখানি নিশ্চিন্ত হয়ে ক্যাপ্টেন হাজরা পেনসন্ নিয়ে সুদূর পাঞ্জাব হ’তে বহুদিন পরিত্যক্ত বাংলার গ্রামে চলে এলেন। মেয়েকে নিজেই শিক্ষা দিতেন ও শেষজীবনে কুলগুরুর কাছে প্রায়শ্চিত্ত বিধান নিয়ে মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণ পূর্ব্বক সাধন ভজনে মনোনিবেশ করলেন। বাড়ী-ঘর সম্পত্তি দখল করতে অবশ্য মামলা না করে উপায় ছিল না।

 কন্যার বিবাহ সহজেই জুটে গেল। বিবাহের অত্যল্পদিন পরে নিজের সঞ্চিত কিছু অর্থ প্রভৃতির সঙ্গে আজ যে-সব কথা আপনাকে লিখছি এই কাহিনী-লেখা একটি পত্র মেয়ের হাতে দিয়ে বললেন, ‘আমার মৃত্যুর পর পড়ে দেখো। সূযি তোমার ভাই নয়, কেউ নয়, শুধু তোমার মার জন্যই বাধ্য হয়ে তাকে আমি দুধ কলা দিয়ে কালসাপের মতই পুষেছিলেম। সাপের শোলুই সাপই হয়, এতদূর পালিয়ে এসেছি তার অত্যাচারের ভয়ে। হয়ত এখানে তার মুখ বার করবার সাহস হবে না।’