পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু

কাণ্ড করিবেনই বা কেন? একি তার পূর্ব্বাপর পরিচিত সেই পরম স্নেহময় পিতা? মাত্র তিনটি বৎসর, তিন বৎসর তার মা মরিয়াছেন আর এরই মধ্যে তাঁর এই অধঃপতন! সুনীতির মানস-নেত্রে ফুটিয়া উঠিল তার মায়ের মুখ, আপনার শক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ধৈর্য্য ও গাম্ভীর্য্যে অতি সংযত অথচ স্নিগ্ধ সহাস্য মুখে যেন পরম ঔদার্য্য মাখানাে, কি অপূর্ব্ব দর্শনাই যে ছিলেন তিনি! বছর চল্লিশের কাছাকাছি বয়স হইয়াছিল, শরীর মনে কোথাও এতটুকু ক্লান্তি দেখা দেয় নাই, তেমনি তাঁর স্বামী-প্রেমের পরিপূর্ণ সরােবরেও না। ঠিক সেই তরুণ বয়সের মতই চন্দ্রকুমার স্ত্রীর আশেপাশে মুগ্ধ মধুপের মতই প্রেমের গুঞ্জন গাহিয়া দুটি জীবনকে চিরশ্যামলতায় নবীন করিয়া ভরাইয়া রাখিয়াছিলেন। সংসার ছিল অভাবহীন, জীবন ছিল পরিপূর্ণ। সেবাকুশল শুচিতায় সমস্তই ছিল মধুরতম। হাস্যে-রহস্যে সুপ্রফুল্ল দিনগুলি ছিল ঠিক যেন অব্যাহত একটি অপূর্ব্ব ছন্দে গাঁথা।

 সহসা মেঘ না জমিতেই বাজ পড়িল। সুনীতির মা সুকুমারী অকস্মাৎ মারা গেলেন, সংসারে লাগিল আগুন, সে আগুন ধীরে ধীরে তাঁর সমস্ত সংসারকে, তাঁর পরিত্যক্ত পতি-পুত্রীকে ভস্মীভূত করিতেছে, ছাই হইয়া যাইতে বেশী আর বাকিও নাই। চন্দ্রকুমার পত্নীবিয়ােগে মেয়েদের বিধবা হওয়ার চেয়েও বড় বেশী শােকার্ত্ত হইলেন, তাদেরই মত আমিষ আহার ত্যাগ করিলেন, চাকরী ছাড়িয়া অসময়ের পেন্সনে যথেষ্ট অর্থ ক্ষতি স্বীকার করিলেন, গীতা পাঠে যােগবাশিষ্ট রামায়ণে চিত্ত ঢালিয়া দিলেন; কিন্তু বেশীদিন এভাবও তাঁর রহিল না, এটা শ্মশান-বৈরাগ্যের মতই মাসকতক চলিয়াছিল এবং সুনীতির পক্ষে তখনও ব্যাপারটা খুবই শান্তির ব্যাপার হয় নাই। স্নান নাই, আহার নাই, সারা দিনরাত্রি কাতর দীর্ঘশ্বাস,