সেই যে পরলোক হইতে গভীর ব্যথাহত চিত্তের নিগূঢ় সাবধানতার বাণী একটা নিদারুণ অমঙ্গলের নির্দ্দেশ দিয়াছিল, সে যে এমন মুখামুখি আগাইয়া আসিয়া আক্রমণোদ্যত হইয়াছিল, কে তাহা জানিত! মাসের পর মাস অতিবাহিত হইয়া চলিয়া গেল, এর কোনই ব্যতিক্রম ঘটিল না। চন্দ্রকুমার তাঁর চন্দ্রকিরণেরই মত পরম রমণীয় স্নিগ্ধ শীতলতা পরিহার পূর্ব্বক দিনের পর দিন ক্রমশঃই তপ্ত নিদাঘের উগ্রজ্বালা তাঁর চারিদিকে বিচ্ছুরিত করিতে থাকিলেন; ফলে নিজের ত যা’ হইল তা হইলই,—দগ্ধিয়া দগ্ধিয়া মরিতে লাগিল কন্যা সুনীতি। জ্বালার তার পরিসীমা রহিল না। কলেজ ছাড়িয়াছে, এম-এ পরীক্ষা না হয় নাই বা দিল, এমন কিছু বড় ব্যাপার এটা নয়, বাপের জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার করা সে কিছু তার পক্ষে খুব বেশী কথা নয়; কিন্তু এই যে দিনের পর দিন সমস্ত মানসিক ব্যাপারের উপর এতখানি শারীরিক কষ্ট, অনভ্যস্ত শরীর যে আর এই ক্লেশভার বহন করিতে স্বীকৃত হইতেছে না। মাথা ঘুরিয়া কতদিন রান্নাঘরে পড়ে পড়ে হয়, কোনমতে সামলাইয়া লয়, বুক প্রায়ই ধড়ফড় করে, দেহ শীর্ণ, বর্ণ মলিন হইয়া যাইতেছে, তার আতঙ্ক-বিস্ফারিত সুন্দর দুটি চোখের কোলে অর্দ্ধবৃত্তাকারে কালির রেখা ফুটিয়া উঠিয়াছে, অথচ কতই বা তার বয়স! এই বয়সেই তো মেয়েরা খাইয়া পরিয়া পড়াশোনা করিয়া ভবিষ্যতের সুখময় সানন্দ জীবনের জন্য নিজেদের তৈরী করিয়া লয়। সুনীতির সকরুণ শান্ত মুখখানি দেখিলেই একটি আলোক-শিখা নেবা গৃহ-প্রদীপের কথা স্বতঃই মনে পড়ে।
খিড়কীর দরজাটির বাহিরের দিকের কড়াটি খুট খুট করিয়া ঈষৎ নড়িল, কে যেন অতি মৃদু সঙ্কোচে সন্দেহ-ভীরু হস্তে সসঙ্কোচে আত্মপ্রকাশ করিতে চাহিতেছে। কে? সুনীতি ছাইমাখা হাত ধুইয়া